Logo
Logo
×

সারাদেশ

মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

Icon

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম

মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

বিজয়ের মাসে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের তারাপুর কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রায় ৪ শতাংশ জায়গার সংরক্ষিত বাঁশের সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা অংশে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভোররাতের দিকে দুর্বৃত্তরা কবরস্থানটির সীমানা প্রাচীর ও বাঁশ দিয়ে ঘেরা অংশে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

খবর পেয়ে রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোরে ফজরের ওয়াক্তে মসজিদে মুসুল্লিরা নামাজ পড়তে এলে কবরস্থানে আগুন দেখতে পান। পড়ে মসজিদের মাইকে আগুন লাগার ঘটনা বলতে থাকলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত এসে আগুন নেভান। আগুন লাগার স্থানে পেট্রল ও কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। 

এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের পরিকল্পিত নাশকতা হিসেবে দেখছেন। তাদের অভিযোগ— যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মানে না, স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, তারাই এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ করতে পারে। দেশের জন্য জীবন দিলাম, আজ স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরও নিরাপদ নয়?

জানা যায়, ১৯৪৬ সালে তারাপুর কবরস্থানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিন একরের বেশি জায়গার উপর অবস্থিত এ কবরস্থানে ২০২২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চার শতাংশ জায়গা আলাদা করে বাঁশের সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। বর্তমানে সেখানে স্থানীয় পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে।

তারাপুর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও কবরস্থান দেখভালের দায়িত্বে থাকা শহিদুল ইসলাম জানান, ফজরের নামাজের আজান দিতে যাওয়ার সময় তিনি আগুন দেখতে পান। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও হেফজখানার শিক্ষার্থীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

তিনি আরও বলেন, এটি দুর্ঘটনা নয়। কবরস্থানে বিদ্যুৎ নেই, আশপাশেও আগুন ধরার কোনো উৎস নেই। এটি স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত নাশকতা।

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. সমশের আলী বলেন, একটি স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর পর্যন্ত এখন হামলার শিকার হচ্ছে। মনে হচ্ছে, ৭১-এর পরাজিত শক্তিরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও সাবেক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান জাহাঙ্গীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার পক্ষের কারো দ্বারা এমনটি হতে পারে না। যারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না তারাই আগুন দিয়েছে।

তিনি বলেন, খবর পেয়ে দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা, ইউএনও এবং থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কেরোসিনের গন্ধ এখনো রয়েছে। এ ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্বই ঝুঁকিতে পড়বে। বিজয়ের মাসে এমন ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ঈদগা কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. সজীব হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে তিন একরের বেশি জায়গা নিয়ে স্থাপিত কবরস্থানের প্রায় ৪ শতাংশ জায়গা সংরক্ষিত করে ঘিরে রাখা আছে। সেখানে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে। আগুন দেওয়ার ঘটনার মতো ন্যক্কারজনক কাজ আর হতে পারে না। ঘটনাস্থলে এখনো কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে আমরা এখন থানায় রয়েছি।

এ প্রসঙ্গে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিফাতুল হক যুগান্তরকে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে মনে হয়েছে আগুন ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয়েছে। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি এবং পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম