৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি খুনের ক্লু পায়নি পুলিশ
মাহবুব রহমান, রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বীর মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি নৃশংস হত্যার ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ হত্যার ‘মোটিভ’ সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছে। খুনের ঘটনায় তারাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন ওই দম্পতির ছেলে পুলিশ সদস্য শুভেন রায়। রোববার রাতে মামলা দায়ের করেন তিনি।
মামলায় আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ আলামত হিসেবে একটি স্যান্ডেল ঘটনাস্থলে পেয়েছে। সেই স্যান্ডেলের উৎস ধরেই খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। হত্যার মিশন শেষে খুনিরা বাড়ির প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। সেখাইে ওই স্যান্ডেলটি পায় পুলিশ। প্রাচীরের উপর ও একটি টিউবওয়েলের গায়ে পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। সেগুলো সংগ্রহ করেছে সিআইডি পুলিশের টেকনিক্যাল ইউনিট।
সোমবার দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারিক শ্মশানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তার আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়ের মরদেহে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান দেখানো হয়।
শনিবার গভীর রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর চাকলা রায় বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তার স্ত্রী সুর্বণা রায় পুষ্পকে (৬০) নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ এ পর্যন্ত খুনের কোনো মোটিভ খুঁজে না পাওয়ায় এ নিয়ে রহস্যের নানা ডালপালা বিস্তার করছে।
পুলিশ ও প্রতিবেশীদের কাছে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, যোগেশ চন্দ্র রায়ের পরিবারের সঙ্গে শ্মশান ও মন্দিরের জমি নিয়ে তার শরিকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। যোগেশ চন্দ্র রায় শ্মশানের জন্য ৯ শতক জমি দান করেন। এ নিয়ে তার শরিকদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এ ঘটনার সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ পেশাদার কিলার দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।
পুলিশ এমন একটি সূত্র ধরে খুনের রহস্যের কিনারা খোঁজার চেষ্টা করছে। এমনি আভাস দিয়েছেন তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আবু সাঈম।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি ঘটনা; তবে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা একসঙ্গে এ ঘটনায় কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার জন্য আরও কিছু তথ্য পেয়েছে। সব কিছু মিলেই কাজ করছে পুলিশের তদন্ত দল। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক বা অন্যকোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তার দুই ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন। এক ছেলে র্যাব ও পুলিশে বর্তমান কর্মরত। তার নিকটাত্মীয় উদয় চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো শক্রতা নেই এলাকায় কারো। তবুও কেন খুনের ঘটনা? সবাইকে এটা ভাবিয়ে তুলেছে।
রংপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন জানিয়েছেন, খুনের পারিপার্শ্বিকতা দেখে ধারণা করা যায়, কিলিং মিশনে একাধিক কিলার জড়িত। আঘাতের চিহ্ন থেকে বোঝা যায় দীর্ঘ সময়ের কোনো আক্রোশের জেরে তাদের নৃশংসভাবে মাথায় কুপিয়ে হত্যা মৃত্যু নিশ্চিত করে খুনিরা নির্বিঘ্নে চলে যায়। কোনো ডাকাতি বা লুটের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী এজাহারে বলেছেন, ৬ ডিসেম্বর রাত ৯টা ২২ মিনিটে বাবা-মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন তিনি। পরদিন সকালে ভাগিনা দীপক রায়ের মাধ্যমে হত্যার খবর জানতে পারেন তিনি। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, রাতে যেকোনো সময় দুর্বৃত্তরা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে। ডাইনিং রুমে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়ের রক্তাক্ত মরদেহ এবং রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুটো মরদেহেরই মাথার খুলি ক্ষতবিক্ষত হয়ে মগজ বের হয়েছিল।
সকালে বাড়িতে কাজ করতে আসা দীপক চন্দ্র রায় ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে সন্দেহ হলে মই বেয়ে ঘরে ঢুকে প্রথমে যোগেশ রায়ের এবং পরে রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের মরদেহ দেখতে পান। পরে তিনি প্রতিবেশীদের খবর দেন। তারাগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা টিম নিহত যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে নজরদারি রেখেছে। তারা ঘটনার রাতে ও পরে যেসব শরিকের সঙ্গে শ্মশানের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল তাদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তারাগঞ্জ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আবু সাঈম বলেন, গলা কেটে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। জড়িতদের শনাক্তে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।
