ফরিদগঞ্জে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নিচ্ছে মাটিখেকো চক্র
চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম
ফরিদগঞ্জে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নিচ্ছে। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত কয়েক বছর ধরে শীত শুরু হলে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মাটিখেকো হিসেবে পরিচিত বিশাল চক্র ব্যস্ত হয়ে পড়ে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে ব্যবসার ধান্ধায়।
এই মাটিখেকো চক্রটি কৃষকদের নানাভাবে বুঝিয়ে বা জোরপূর্বক রাজি করিয়ে দেদার নিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান টপসয়েল। প্রতি বছর শীত এলেই চাঁদপুরের গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান উপজেলা ফরিদগঞ্জে এদের তাণ্ডব সীমা ছাড়িয়ে যায়।
দিনের বেলা প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে চুপচাপ থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই এরা শুরু করে মাটি কাটা। আবার বেছে নেওয়া হয় ছুটির দিনগুলো।
পরিবেশ আইন অমান্য করে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। ফলে কৃষি জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ভেঙে যাচ্ছে এলাকার রাস্তা-ঘাট। এলাকাবাসীর দাবি টপসয়েল বিক্রেতা এবং ক্রেতা ও এই কাজের সঙ্গে অন্যান্য যারা জড়িত তাদের অধিকাংশই স্থানীয় রাজনৈতিক পাতি নেতা ও ব্রিক ফিল্ডের দালাল কিংবা মালিক।
জানা যায়, উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের তেলিশাইর গ্রামের অন্তত দুটি এলাকায় দেদার চলছে এ মাটি কাটার উৎসব। কৌশল বুঝে মাটি কাটার চক্রটি কখনো দিনে, কখনো রাতের বেলা মাটি কেটে নিচ্ছে। এর পাশাপাশি উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ইটভাটা অধ্যুষিত সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়ন, গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন, পাইকপাড়া দক্ষিণ, বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়ন এভাবে চলছে মাটিখেকোদের মাটি কাটার উৎসব।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাইরের অংশে প্রতি বছর বর্ষায় পলি মাটি জমে। ফলে এসব এলাকায় পরবর্তীতে ভালো ফসল হয়; যা উপজেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয়ভাবে ভূমিকা রাখছে। আবার সেচ প্রকল্পভুক্ত এলাকার কৃষিজমি থেকে মাটা কাটার ফলে জমিগুলো ক্রমশ নিচু হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তেলিশাইর গ্রামের রহমান, জিসানসহ লোকজন জানান, তাদের গ্রামের অন্তত দুটি স্থান থেকে মাটিখেকোরা ফসলি এসব জমি থেকে এক্সকেভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। আর এসব মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় ইটভাটাসহ নানা কাজে।
মাটি ব্যবসায়ীরা প্রতি ট্রাক্টর মাটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায়। আর এতে অধিক মুনাফা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনপ্রতিনিধি জানান, এই চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত। ফলে তারা মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না। প্রভাবশালীরা সবই একই। সরকার পরিবর্তন হলে শুধু কয়েকজন পরিবর্তন হয়, বাকিরা সবাই থাকে। এখানে কে কোন রাজনৈতিক দলের তা কোনো বাধা নয়।
সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন জানান, টপসয়েল কাটার সংবাদ শুনে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ইউএনওর নির্দেশে তেলিশাইর গ্রামের একটি বিলের জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু পূর্ব তেলিশাইর বিলের জমি থেকে মাটি কাটা চলছে।
সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের তহশিলদার শাহাদাত হোসেন জানান, ইতোপূর্বে মাটি কাটার সংবাদ পেয়ে সরেজমিন গিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি; কিন্তু পরবর্তীতে তারা আবার মাটি কাটা শুরু করেছে শুনেছি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন দুলাল বলেন, কৃষি ও কৃষকদের রক্ষায় মাটিখেকোদের থেকে টপসয়েল বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, জমির উপরিভাগের ছয় থেকে ১০ ইঞ্চিতে জৈব পদার্থ বিদ্যমান থাকে। উপরিভাগ কাটার ফলে জমির ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তবুও অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সামান্য কিছু টাকার জন্য জমির উপরিভাগের মাটি কাটার অনুমতি দিচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। এ বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার বড়ুয়া বলেন, জমির উপরিভাগের মাটি কাটার খবর পাওয়ামাত্রই অভিযান চালানো হচ্ছে। যারাই অবৈধ এসব কর্মকাণ্ড করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
