Logo
Logo
×

সারাদেশ

একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে নওমুসলিম মায়ের আকুতি

Icon

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম

একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে নওমুসলিম মায়ের আকুতি

আড়াই বছরের ছোট্ট হামীম। দুই মাস আগেও বাড়িময় ছোটাছুটি করত শিশুটি; কিন্তু এখন পুরো শরীরে পানি জমায় এখন খাটে বসে দিন কাটে তার। সমবয়সিরা যখন খেলে হামীম তখন বিছানায় বসে খেলনা নিয়ে খেলাধুলা করে। শরীরের যন্ত্রণা নিয়েও মুখভরা হাসি ছোট্ট এই শিশুটির।

চিকিৎসক বলেছেন, হামীমের দুটো কিডনিই নষ্ট হওয়ার পথে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মারা যেতে পারে শিশুটি!

পরিবারের দরিদ্রতার কারণে বিনা চিকিৎসায় এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ভাটোপাড়া গ্রামের দিনমজুর সাজেদুল ইসলাম ও গৃহিণী তমা খাতুনের একমাত্র সন্তান হামীম।

সরেজমিন জানা যায়, হামীমের বাবা সাজেদুল ইসলাম ঢাকায় একসময় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেখানেই পরিচয় হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী তমা নামের এক নারীর সঙ্গে। পরবর্তীতে সেই তমাকে পালিয়ে বিয়ে করে এলাকায় বসবাস শুরু করেন। এরপর জন্ম নেয় পুত্রসন্তান। বাবা-মা একমাত্র সন্তানের নাম রাখেন হামীম হোসেন। অভাব থাকলেও ছেলেসন্তান জন্ম নেওয়ায় পরিবারে বইছিল খুশির বন্যা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখত ছোট্ট হামীম। 

কিন্তু দুই মাস আগে হঠাৎ করেই পুরো শরীর ফুলে যায় ছোট্ট হামীমের। বাবা সাজেদুল ইসলাম ধারদেনা করে পাবনায় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসক দেখান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় হামীমের দুটো কিডনিই নষ্ট হওয়ার পথে। সেখানে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করালে হামীমের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হতে পারে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এখানেই শেষ নয়, দ্রুত চিকিৎসা না করালে মারা যেতে পারে একমাত্র আদরের সন্তান হামীম।

স্থানীয় এক ব্যক্তির হাঁসের খামারে কাজ করা সাজেদুল ইসলাম চিকিৎসকের এমন কথা শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মাস শেষে যে টাকা উপার্জন করেন সেটা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের সংসার। সেখানে এত টাকা কোথায় পাবেন তারা?

এদিকে ছেলের এমন করুণ পরিণতির কথা জেনে নওমুসলিম মা তমা খাতুন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা তাদের আদরের একমাত্র সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। এখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে ছোট্ট হামীম। একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছে দরিদ্র এই পরিবারটি।

বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা তমা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, আমার একমাত্র সন্তান হামীম। আমি ওরে (হামীম) ছাড়া বাঁচব না। আমাদের বসতঘর ছাড়া কিছুই নেই! আমরা টাকার জোগাড় করতে পারছি না। আপনারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন, নইলে আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারব না।

বিষয়টি চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুসা নাসের চৌধুরীকে জানালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, সন্তানের অসুস্থতা যেকোনো মা-বাবার পক্ষে সহ্য করা কষ্টকর। আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে সহযোগিতার ব্যবস্থা করব। তবে সরকারি যে সহযোগিতা পাবে সেটা দিয়ে পুরোপুরি চিকিৎসা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম