Logo
Logo
×

সারাদেশ

দোহারে প্রকৃত আসামি বাইরে, নির্দোষ ব্যক্তি হাজতে!

Icon

কাজী সোহেল, দোহার (ঢাকা) থেকে

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ পিএম

দোহারে প্রকৃত আসামি বাইরে, নির্দোষ ব্যক্তি হাজতে!

গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় ঢাকার দোহারে আলমাছ নামে এক যুবককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে দোহার থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ২০০২ সালে মিরপুর থানায় দোহার উপজেলার পূর্ব ধোয়াইর খলিল আহম্মেদের ছেলে আলমাছের নামে একটি অস্ত্র মামলা হয়। মামলায় ২০০৪ সালে ১০ বছরের সাজা হয় আলমাছের। এরপর থেকে আলমাছ পলাতক রয়েছেন। সেই মামলায় গত ৪ নভেম্বর দোহারের সুন্দরীপাড়া থেকে শেখ খলিলের ছেলে আলমাছ নামে এক নিরপরাধ যুবককে গ্রেফতার করেন দোহার থানার মাহমুদপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরির্দশক (এসআই) জুবাইদুল হক।

গ্রেফতারকৃত যুবকের পরিবারের দাবি, আলমাছ কৃষিকাজ ও ইলেকট্রিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জীবনে কখনই ঢাকা শহরে থাকেননি বা যাননি। অথচ তার ও বাবার নামে মিল থাকায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আলমাছের বাবা শেখ খলিল বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। সে কখনো ঢাকায় যায়নি। দেশেই ইলেকট্রিকের কাজ করত। এর আগেও আমার ছেলেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তখন তারা তদন্ত করে দেখেছে আমার ছেলে আলমাছ প্রকৃত আসামি নয়। এরপর ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে। তার প্রত্যয়নপত্রও রয়েছে আমাদের কাছে, প্রত্যয়ন দেখাতে চাইলে পুলিশ তা দেখেনি। জোর করে নিয়ে জেলখানায় দিয়ে দিছে। আমার ছেলের মুক্তি চাই। আর যে প্রকৃত অপরাধী তাকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালেও আলমাছকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তখন তদন্ত করে দেখে আমাদের আলমাছ আর আসামি আলমাছ এক ব্যক্তি নয়, তখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

আলমাছের বোন আসমা ও স্ত্রী বলেন, ২০০২ সালে যখন মামলা হয় তখন এই আলমাসের বয়স ছিল ১৪ বছর। আর মামলার প্রকৃত আসামির বয়স ছিল ২৪ বছর। তাছাড়া প্রকৃত আসামিকে অস্ত্রসহ ধরা হয়েছিল, সেখানে পুলিশের কাছে তাহলে অবশ্যই প্রকৃত আসামির ছবি আছে, তারপরও বারবার ভুল করে এই আলমাছকে ধরা হচ্ছে। পুলিশকে বললেও কোনো কথা শোনে না বরং আমাদের পরিবারের লোকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং আলমাসের মুক্তি চাই।

পুলিশ সূত্র বলছে, এই নাম ঠিকানায় এই আলমাছের পরিবার ছাড়া অন্য কেউ নয়াবাড়িতে ছিল না।

চর মাহমুদপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জুবাইদুল হক বলেন, আমার কিছু করার নেই। আমি ভালো করে খোঁজখবর নিয়েছি- এই নামে ধোয়াইর কোনো লোক নেই। 

সরেজমিন নয়াবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব ধোয়াইর এলাকায় গিয়ে  স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জলিল মাদবরের আপন ভাই ছিলেন খলিল আহমেদ। আর খলিল আহমেদ তার পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুর এলাকায় বসবাস করতেন। খলিল আহমেদের ছেলের নাম মো. আলমাছ। বর্তমানে জলিল মাতবর ও খলিল আহমেদ কেউ বেঁচে নেই।

তবে জলিল মাতবরের দুই ছেলের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়- প্রকৃত আসামি আলমাছরা ঢাকার মিরপুরে বসবাস করেন এবং আলমাছের বাবা খলিল আহমেদ মারা গেছেন ও আলমাছ দেশের বাইরে বসবাস করছেন বলেও জানান তারা।

জলিল আহমেদের ছেলে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার চাচা খলিল আহমেদ তার জমি তাদের কাছে বিক্রি করে চলে যান।

জলিল মাদবরের দুই ছেলে আনোয়ার হোসেন ও ফিরোজ আলম বলেন, আমার চাচা খলিল আহমেদ ও চাচাতো ভাই আলমাছ অনেক আগে থেকেই ঢাকার মিরপুরে বসবাস করেন। আমার চাচা খলিল আহমেদ প্রায় ৫-৬ বছর হয়েছে মারা গেছেন। আর আলমাছ সম্ভবত দেশের বাইরে চলে গেছেন। তবে আলমাছের নামে মামলার বিষয়ে তারা জানেন না বলে জানান।

মামলার নথিতে তখন আলমাছের বয়স দেখানো হয় আনুমানিক ২৪ বছর, আর এখন যে আলমাছকে ভুলবশত পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে ২০০২ সালে সে আলমাছের বয়স ছিল ১৪- এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।

মূলত যে আসামি আলমাছ তার পৈতৃক বাড়ি দোহারে থাকলেও তারা ঢাকার মিরপুরে বসবাস করেন বলে নিশ্চিত করেন জলিল মাদবের দুই সন্তান আনোয়ার হোসেন ও ফিরোজ আলম।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার বলেন, আপনাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট থাকলে আমাকে দিন আমি বিষয়টি দেখব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম