Logo
Logo
×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে ১১০০ জন রোগী নিয়ে গবেষণা

চিকুনগুনিয়ার ভেরিয়েন্ট পাকিস্তান ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিল

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম

চিকুনগুনিয়ার ভেরিয়েন্ট পাকিস্তান ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিল

চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া এখন দ্রুত বিস্তারমান একটি মশাবাহিত রোগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটি কেবল স্বল্পমেয়াদি জ্বর নয়; এটি দীর্ঘস্থায়ী অস্থিসন্ধির ব্যথা, কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে।

এ ভাইরাসের জিনগত বিশ্লেষণে পাকিস্তান, ভারত ও থাইল্যান্ডের ভেরিয়েন্টের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এআরএফ) যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার নগরীর চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন।

এ সময় তিনি গবেষক, চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য  বিশেষজ্ঞ এবং সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ামুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ জন রোগীকে নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী, রেলওয়ে হাসপাতালের ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দিন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আদনান মান্নান।

গবেষকদের মতে, শুধুমাত্র ডেঙ্গুকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ কৌশল দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। চিকুনগুনিয়া ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগকে সামনে রেখে সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

গবেষণায় ওঠে আসে, চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে ডেঙ্গু (১০ শতাংশ) ও জিকার (১ দশমিক ১ শতাংশ) একযোগে সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। নগরীর কোতোয়ালি, বাকলিয়া, ডবলমুরিং, আগ্রাবাদ, চকবাজার, হালিশহর ও পাঁচলাইশ এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা বেশি ছিল। উপজেলা পর‌্যায়ে সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালী ও আনোয়ারায় সংক্রমণ তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধির ব্যথা ৩ মাসেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়েছে। গড়ে একজন রোগীর চিকিৎসা ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১০-১৫ হাজার টাকা।

রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গোড়ালি, হাঁটু, কব্জি ও হাতের অস্থিসন্ধি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সকালে অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া ও ফোলা ভাবের লক্ষণ পাওয়া গেছে। জিনগত বিশ্লেষণে চট্টগ্রামের চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে অর্ধশতাধিক মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে, যা আগে পাকিস্তান, ভারত ও থাইল্যান্ডে পাওয়া ভেরিয়েন্টের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

গবেষণার ফলাফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ১ হাজার ৭৯৭ রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ রোগী সতর্কতামূলক লক্ষণসহ ডেঙ্গুতে ভুগছিলেন এবং একটি অংশ গুরুতর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। প্রায় সব রোগীরই জ্বর ছিল। বমিভাব, মাথাব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেটব্যথা ও ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়া গেছে।

জনসংখ্যাগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণ-যুবকরা। শহরাঞ্চলের মানুষ গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়েছেন এবং পুরুষ রোগীর হার নারীদের তুলনায় বেশি। সহ-রোগ হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ ও শরীরে তরল জমে যাওয়ার মতো জটিলতা পাওয়া যায়।

গবেষক দলে আরও ছিলেন- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. এমএ সাত্তার, ডা. মারুফুল কাদের, ডা. নুর মোহাম্মদ, ডা. হিরন্ময় দত্ত, ডা. ইশতিয়াক আহমদ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. এএসএম লুতফুল কবির শিমুল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. রজত বিশ্বাস, ইউএসটিসির আইএএইচএসের ডা. আয়েশা আহমেদ, এপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ডা. মোহাম্মদ আকরাম হোসেন, নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. অরিন্দম সিং পুলক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. মো. মাহবুব হাসান ও মহব্বত হোসেন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএমএএম জুনায়েদ সিদ্দিকি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম