Logo
Logo
×

সারাদেশ

পদ্মার চরে শেয়ালের হানা, দুই শতাধিক গবাদিপশু জখম

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম

পদ্মার চরে শেয়ালের হানা, দুই শতাধিক গবাদিপশু জখম

ফাইল ছবি

রাজশাহীর পদ্মার চরাঞ্চলে সংঘবদ্ধ শেয়ালেরা হানা দিচ্ছে বাথানের গরু ছাগলের পালে। রাত শেষ হওয়ার আগেই শেয়ালেরা দলবদ্ধভাবে ঝোপ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে হানা দিচ্ছে বাথান বাড়িগুলিতে যেখানে চরাঞ্চলের মানুষ গরু ছাগলের পাল রাখেন।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে চরাঞ্চলের বিভিন্ন বাথানে শেয়ালের কাপড়ের শিকার হয়েছে দুই শতাধিক গরু ছাগল। শেয়ালের হামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন রাখালও।

এরপর থেকে এলাকাবাসী রাত জেগে চরের ভেতরে থাকা বাথানের গরু ছাগল রক্ষায় পাহারা বসিয়েছেন। তারা আগুন জেলে শেয়াল তাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মাঝারদিয়াড় ও খানপুর চরের ভুক্তভোগী কৃষকেরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কৃষকেরা আরও জানিয়েছেন গত শুক্রবার বেশ কিছু সাঁওতাল চরে শেয়ালের গর্ত খুঁড়ে বেশ কিছু শেয়াল ও বন্য শুয়োর শিকার করে নিয়ে যায়। এর একদিনের মধ্যে শেয়ালেরা চরের বাথানবাড়িতে দলবদ্ধভাবে হামলা করল।

রাজশাহী মহানগর সংলগ্ন পদ্মা নদীর বিপরীতে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মুল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন বিশাল চরের মানুষ কৃষি কাজের পাশাপাশি গবাদি পশু পালন করেন। এই গবাদি পশুর দুধ বিক্রি ছাড়াও গরু ছাগল বিক্রি করে তারা ভাল আয় রোজকার করেন। চরগুলিতে তৃণ চারণভূমি থাকা পশুপালনে কৃষকদের পশুখাদ্য কিনতে হয় না। এ কারণে পশুপালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চরাঞ্চলে। চরের প্রতিটি কৃষকের দু-চারটি করে গবাদি পশু রয়েছে। বাড়িতেও তারা ছাগল ভেড়া পালন করেন।

এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, গত শনিবার ভোরের দিকে চরের ঝোপ জঙ্গল ও ফসলি জমি থেকে বেরিয়ে আসে শতাধিক শেয়াল। শেয়ালেরা খানপুর চরের বাথানবাড়িগুলি চারদিক থেকে ঘেরাও করে একযোগে আক্রমণ শুরু করে। শেয়ালেরা প্রথমে বাথানবাড়ির ভেতরে ঢুকে ছোট গরুগুলিকে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে। পাশাপাশি ছাগলগুলিকে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে সেগুলিকে বাথানের বেড়ার বাহিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শেয়ালের আক্রমণে গরু ছাগলগুলি ডাকাডাকি শুরু করলে কৃষকেরা টের পেয়ে ছুটে যান। তারা লাঠিসোটা নিয়ে শেয়ালের দলকে তাড়া করে। এ সময় শেয়ালেরা ঘুরে দাঁড়িয়ে তিন কৃষকের পায়ে কামড় বসায়। এক পর্যায়ে সীমান্তের নো-ম্যান ল্যান্ডসের দিকে থাকা ঝোপ জঙ্গলের ভেতরে পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরকে উপদ্রুত এলাকায় পাঠান।

সোমবার পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল লতিফসহ প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পদ্মার চরের শেয়াল উপদ্রুত গ্রামগুলি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ডা. আব্দুল লতিফ জানান, শেয়ালের দল চরের বাথানের দুই শতাধিক গবাদিপশুকে কামড় দিয়েছে। কয়েকজন কৃষকও শেয়ালের কামড়ে আহত হয়েছেন। আমরা দিনভর আক্রান্ত গবাদিপশুগুলিকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। শেয়ালের কামড়ে আহত আফসার আলী (৬০) ও আক্কাস আলীসহ (৬৫) আরও কয়েকজনকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, শেয়ালের কামড়ে জলাতঙ্ক হতে পারে। তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে সেই আশঙ্কা কমে গেছে।

পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য প্রমিজ হোসেন জানান, পদ্মার চরজুড়ে অনেকগুলি গবাদিপশুর বাথান রয়েছে। এসব বাথানে কয়েক হাজার গবাদিপশু আছে। শীতকালে শেয়ালেরা শক্তিশালী থাকে। পদ্মার ভাঙনে চরগুলি বিলীন হওয়ায় শেয়ালদের আবাসস্থল কমে গেছে ও তাদের খাদ্য সঙ্কট চলছে। হতে পারে এ কারণে শেয়ালেরা গরু ছাগল টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় শেয়ালেরা আক্রমণ চালিয়ে সীমান্তের ওপারে ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, শেয়ালেরা বারমাসই বাসা বাড়ির খোঁয়াড় থেকে মুরগি নিয়ে যায় রাতের বেলা। কৃষকেরা মুরগি পালনে সতর্ক থাকায় শেয়ালেরা বাথানবাড়িতে আক্রমণ করেছে। তবে এমন দলবেঁধে আক্রমণ শেয়ালেরা আগে কোনদিন করেনি।

এদিকে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার ভোরের দিকে দ্বিতীয়বারের মতো শেয়ালেরা বাথানবাড়িতে হামলার জন্য কাছাকাছি পৌঁছালেও এলাকাবাসীর পাহারার কারণে তারা বাথানের কাছে ঘেঁসতে পারেনি।

চরের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিনের বেলায়   পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার একদল সাঁওতাল সীমান্ত সংলগ্ন ৬০ বিঘা চর এলাকায় শেয়ালের গর্ত খুঁড়ে বেশ কিছু শেয়াল ও বন্য শুয়োর শিকার করে নিয়ে যায়। এর একদিন পর শনিবার দিনগত রাতের শেষে চরের বাথানবাড়িতে গরু ছাগলের ওপর হামলা করে। প্রতিশোধ নিতেই শেয়ালেরা এমন নজিরবিহীন হামলা করেছে বলেও এই কৃষক মনে করছেন। এলাকার কৃষকেরা এখন রাত জেগে শেয়াল ঠেকাতে পাহারা বসিয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম