বগুড়ায় জুলাই হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আসামি ৩০২
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ায় আরও একটি জুলাই হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান করে ২০২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ৩০২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বগুড়া শহরের পশ্চিম বৃন্দাবনপাড়ার নূর হোসেন মণ্ডলের ছেলে মো. আলিফ (২৫) দীর্ঘ ১৬ মাস পর বুধবার সদর থানায় এ মামলা করেন।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল্লাহ আল সাদিক জানান, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
বাদী মামলা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি; তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপু, সাবেক এমপি হাবিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি মজিবর রহমান মজনু, সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান শফিক, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মানিক, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওয়ান ফার্মা লিমিটেডের এমডি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আল রাজী জুয়েল, জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলাল, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল মহিদুল ইসলাম জয়, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ সার্জিস আহম্মেদ টিপু, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম মোস্তফা বাবু, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা সুলতানা সুমি শাহ্, যুব মহিলা লীগ নেত্রী পারুল বেগম, আওয়ামী শীর্ষ সন্ত্রাসী ওমর খৈয়াম রোকন সরকার, গাবতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মুক্তা, জেলা জাসদ নেতা এমদাদুল হক এমদাদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হায়দার আলীর ছেলে ইসতিয়াক হায়দার সঞ্চয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ড. চিত্তরঞ্জন মিশ্র প্রমুখ।
বাদী বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আলিফ মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য। গত ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে ছাত্র-জনতার মিছিল নিয়ে শহরের চাঁদনীবাজার এলাকায় পৌঁছেন। এ সময় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হুকুমে তাদের মদদপুষ্ট আসামিরা ককটেল, হাতবোমা ও অন্য আসামিরা লাঠি, কিরিচ, হাঁসুয়া, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, বার্মিজ চাকু নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাজাকারের বাচ্চা গালি দেওয়াসহ হত্যার হুমকি দেন। তখন প্রধান আসামির হুকুমে অন্য কয়েকজন আসামি মিছিলে ককটেল ও বোমা নিক্ষেপ করে বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।
তিনি জানান, আসামিরা গুলি করলে তার (বাদী) কপাল, বুক ও উরুতে গুলি লেগে রক্তাক্ত জখম হন এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এছাড়া অন্য আসামিরা তাকে ও ছাত্র-জনতাকে মারপিট করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করেন। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-জনতার মিছিল এলে আসামিরা বিভিন্ন হুমকি দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রথমে তাকে (বাদী মো: আলিফ) বগুড়া শহরের নামাজগড়ে স্বদেশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএইচ এ ভর্তির পর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে মামলার বাদী মো. আলিফকে ফোন দিলে তিনি মামলা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি মামলার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এ মামলার কয়েকজন আসামি জানান, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মো. আলিফকে দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করিয়েছেন। গত প্রায় এক মাস আগে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও আসামি অন্তর্ভুক্ত ও বাদ দেওয়া নিয়ে দেন দরবার এবং আর্থিক বাণিজ্য শেষে ২৪ ডিসেম্বর সদর থানায় মামলাটি করা হয়েছে।
