রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক রাতেই দুই অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল স্বাস্থ্যকেন্দ্র
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক রাতের ব্যবধানে দুটি স্থানে পরপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরে ক্যাম্প–৪ এর ডি-ব্লকে আগুন লেগে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। এর আগের রাতেই কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পে পাঁচটি বসতঘর পুড়ে যায়। ফলে শীতের মৌসুমে ঘনঘন অগ্নিকাণ্ডে ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোর ৫টায় মধুরছড়া এলাকার ৪ নম্বর ক্যাম্পের ডি-ব্লকে ‘ওবাট হেলথ পোস্ট’ নামে পরিচিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগুন লাগে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ফায়ার সার্ভিসের প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাঠামো, ভেতরের মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং ফাইল–ডকুমেন্ট সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য দাতব্য সংস্থা ওবাট হেল্পারস ইউএসএ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে এটি হিউম্যান ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ-এর অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল।
ওবাট হেলপারস বাংলাদেশের হেলথ কো-অর্ডিনেটর ডা. মাহামুদুল হাসান সিদ্দিকী রাশেদ বলেন— আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে পুরো স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুড়ে গেছে। আগুনের কারণ এখনও নিশ্চিত না হলেও তদন্ত চলছে।
তিনি জানান—এখান থেকে রোহিঙ্গা ও আশপাশের স্থানীয় মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতেন। ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক বলেন— এটা আমাদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ছিল। এখন কোথায় যাব?
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে কুতুপালং নিবন্ধিত বিএলকে আগুন লেগে পাঁচটি বসতঘর পুড়ে যায়। স্থানীয়দের ভাষ্য—শীতের রাতে সবাই ঘুমিয়ে ছিল, হঠাৎ আগুন দেখে চিৎকারে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার ডলার ত্রিপুরা বলেন— একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। কেউ আহত হয়নি। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে—তা তদন্তে জানা যাবে।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কুতুপালং ১–ডব্লিউ ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এক হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায় এবং একজনের মৃত্যু হয়। সেই ক্ষত এখনও শুকায়নি—তার মধ্যেই নতুন আগুনে আবারও দগ্ধ হলো রোহিঙ্গা জীবনের আরেকটি অংশ।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড যেন নিয়মিত আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে। মানবিক সহায়তা–নির্ভর এক জনগোষ্ঠীর জীবনে আগুন শুধু ঘর নয়—নিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার শেষ আস্থাও।

