Logo
Logo
×

সারাদেশ

স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার সময় মাঝ নদীতে প্রাণ হারালেন স্বামী

Icon

শিপুফরাজী, চরফ্যাশন (ভোলা)

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৬ পিএম

স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার সময় মাঝ নদীতে প্রাণ হারালেন স্বামী

কিছু দিন ধরে স্ত্রী রহিমা বেগম অসুস্থ। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন হতদরিদ্র জেলে হানিফ মাঝি (৪২); কিন্তু এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হবে তা কে জানত। নদীর ঢেউ আর জালের টানে সারা জীবন লড়াই করে সংসার চালানো হানিফের প্রাণ গেল নদীতেই।

তার মৃত্যু কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক অসহায় পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার করুণ গল্প।

মৃত হানিফ মাঝি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আহাম্মদপুর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদাবাদ গ্রামের মো গেদু শনির ছেলে।

শুক্রবার বিকালে ফরিদাবাদ গ্রামে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত হানিফ মাঝি চার সন্তানের জনক। জেলের কাজ করেই চলত তার পুরো সংসার। সম্প্রতি তার স্ত্রী রহিমা বেগম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় হানিফ বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে স্ত্রীকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে স্ত্রীকে নিয়ে চরফ্যাশনের ঘোষেরহাট লঞ্চঘাট থেকে এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চে ওঠে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হন; কিন্তু রাত ২টার দিকে সন্তানরা খবর পান, তার বাবা হানিফ মাঝি আর নেই।

যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চ মেঘনা নদীতে জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চকে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার হরিণাঘাটা নামক স্থানে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ নদীতে পড়ে যান।

সংঘর্ষের পর অ্যাডভেঞ্চার-৯ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ভাসমান জাকির সম্রাট-৩ থেকে হানিফসহ অনেক যাত্রীকে এমভি কর্ণফুলী-৯ লঞ্চ উদ্ধার করে ঢাকার সদরঘাটে নেওয়ার পথে গুরুতর আহত অবস্থায় হানিফ মাঝি মৃত্যুবরণ করেন। এ খবর ফরিদাবাদ গ্রামে পৌঁছলে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

বিকালে নিহত হানিফ মাঝির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বসত ঘরের সামনে মেয়ে আকলিমা ও ছেলে শামিম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, আমাদের মা অনেক দিন ধরে অসুস্থ। বাবাই সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। ধারদেনা করে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। রাত ১টার দিকে ফোনে শুনি বাবা দুর্ঘটনায় আহত। কিছুক্ষণ পরই জানি আমার বাবা মারা গেছেন। আমরা বরিশালগামী এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চ ও জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চ চালকের বিচার চাই।

নিহতের ভাই আক্তার বলেন, চিকিৎসার আশায় যাত্রা করা মানুষটি শেষপর্যন্ত লাশ হলেন। নদীর বুকে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ শুধু দুটি লঞ্চের নয়, এটি গরিব জেলে পরিবারের জীবনের সঙ্গে নিয়তির ভয়াবহ সংঘর্ষ। তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি করছি।

দুলারহাট থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় আহাম্মদপুর ইউনিয়নের হানিফ নামের একজনের মৃতের খবর পেয়েছি। পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম