Logo
Logo
×

সারাদেশ

রোজার ঈদে ফিরবেন, মেয়েকে বলে বের হওয়া মা রাতেই ফিরলেন লাশ হয়ে

Icon

মো. জসিম জনি, লালমোহন (ভোলা)

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম

রোজার ঈদে ফিরবেন, মেয়েকে বলে বের হওয়া মা রাতেই ফিরলেন লাশ হয়ে

রিনা বেগম। ফাইল ছবি

ঘন কুয়াশায় মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত ভোলার লালমোহন উপজেলার তিনজনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। এর মধ্যে এক মা তার মেয়েকে রোজার ঈদের আগে ফিরে আসবেন বলে বাড়ি থেকে বের হন; কিন্তু রাতেই ফিরে আসেন লাশ হয়ে।

বৃহস্পতিবার রাতে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের ভয়াবহ সংঘর্ষে ৪ যাত্রী নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন।

নিহতদের মধ্যে লালমোহন বদরপুর ইউনিয়নের কাজিরাবাদ গ্রামের রাজমিস্ত্রি গণি ও কৃষক সাজু এবং পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী গ্রামের লাল মিয়া গাজি বাড়ির গার্মেন্টস কর্মী রিনা বেগমের বাড়িতে আহাজারি চলছে।

রিনা বেগমের স্বামী মো. হোসেন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ৭-৮ বছর আগে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের জন্য স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় চলে যান রিনা বেগম। তাদের একমাত্র কন্যা সাথী বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে থাকত। স্থানীয় কচুয়াখালী মহিলা মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাথী মায়ের করুণ মৃত্যুর খবর শুনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে বাবা ও মা একসঙ্গে মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লঞ্চে উঠে কচুয়াখালী ঘাট থেকে। যাবার বেলায় বলে যান রোজার ঈদে আবার ফিরে আসবেন; কিন্তু সেই রাতেই শুনতে পান মায়ের মৃত্যুর সংবাদ। বাবাও গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ১৫ জন যাত্রী।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।

কাজিরাবাদ গ্রামের বেপারীবাড়ির নিহত রাজমিস্ত্রি আব্দুল গণির বাড়িতে স্ত্রী লাইজু বেগম ৩টি শিশু সন্তান নিয়ে আহাজারি করছেন। সন্তানদের এখন কী হবে- কে তাদের দেখবে- এমন আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে ওই এলাকার বাতাস।

জানা গেছে, ওই গ্রামের সেরাজল বেপারীর ছেলে গণি দীর্ঘদিন ঢাকাতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ১০ দিন আগে বাড়িতে আসে। বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে একই এলাকার ৫ জনসহ দেউলা ঘাট দিয়ে লঞ্চে উঠেন। তারা লঞ্চে একই সঙ্গে রাতে ঘুমান। দুর্ঘটনায় গণি ও সাজু নামে দুইজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া মিলন ও শাহাদাৎ নামে তাদের সঙ্গে থাকা দুইজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। নিহত সাজু একই এলাকার খাঁ বাড়ির কালু খাঁর ছেলে। তিনি ঢাকায় একজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করার জন্য যাচ্ছিলেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম