Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বহন করছে সুলতানি আমলের স্মৃতি

ষোলো শতকে নির্মিত ৯ গম্ভুজের সাতৈর শাহী মসজিদ

Icon

জাহিদ রিপন, ফরিদপুর

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ষোলো শতকে নির্মিত ৯ গম্ভুজের সাতৈর শাহী মসজিদ

স্বাধীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের তৈরি করা ৯ গম্বুজবিশিষ্ট সাতৈর শাহী মসজিদ। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রাম থেকে তোলা -যুগান্তর

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার উত্তরাংশে সাতৈর গ্রামে অবস্থিত ‘সাতৈর শাহী মসজিদ’ সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কর্তৃক ষোলো শতকে নির্মিত হয়। মসজিদটি ৯ গম্ভুজ বিশিষ্ট। ফরিদপুর জেলা সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে বোয়ালমারীর ভাটিয়াপাড়া-মধুখালী রেললাইনের ঘোষপুর স্টেশনের কাছে এটি অবস্থিত।

ধারণা করা হয়, শের শাহের আমলে সাতৈর গ্রামের আউলিয়া হযরত শাহ সুফি শায়েফ ছতুরি (রা.) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক ষোলো শতকের দিকে আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে অবশ্য মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়ে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। এরপর বিশ শতকের শুরুর দিকে মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হয়। যা মসজিদটিকে নতুন রূপ দেয়। দেওয়ালের গায়ে সিমেন্ট ও বালির আস্তরণ দিয়ে এতে লাল রং করা হয়েছে। এর পূর্বদিকে টিন-আচ্ছাদিত একটি অংশও যোগ করা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটির চেহারা দেখে একে আর প্রাচীন ইমারত বলে কারও মনে হয় না। অথচ এটি সেই সুলতানি আমলের স্মৃতি বহন করছে।

বর্গাকার এই মসজিদের প্রতি দিকের পরিমাপ বাইরের দিক থেকে প্রায় ১৭ দশমিক ৮ মিটার এবং ভেতরের দিকে প্রায় ১৩ দশমিক ৮ মিটার। শুরুতে এর পশ্চিম দিক ব্যতীত মজিদটির বাকি তিন দিকেই তিনটি করে প্রবেশপথ ছিল। তবে বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথগুলো জানালায় রূপান্তর করা হয়েছে। প্রবেশপথগুলোর খিলান যদিও ছোট মনে হয়, কারণ মসজিদটির মেঝে আশপাশের ভূমি থেকে প্রায় ০.৬ মিটার নিচু। এই মেঝের প্রায় ০.৭৬ মিটার নিচে ছিল এর পুরোনো মেঝে। মসজিদটি দারুণ ৯টি কন্দাকৃতির গম্ভুজ দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে আছে। মসজিদের ভেতরে স্থাপিত পাথরের তৈরি চারটি স্তম্ভও রয়েছে। দেওয়াল এবং দেওয়ালসংলগ্ন ১২টি স্তম্ভ এই গম্ভুজগুলোর ভার বহন করছে।

গম্ভুজ নির্মাণে প্রাচীন পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। পশ্চিম দেওয়ালে বহু-খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি মেহরাব রয়েছে। যার মধ্যে কেন্দ্রীয়টি অপেক্ষাকৃত কিছুটা বড়। মসজিদটির উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ১৫ মিটার দূরে একটি গভীর কূপ রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে ধাপযুক্ত প্ল্যাটফরমের ওপর স্থাপিত একটি সমাধি। এর মধ্যে বেশির ভাগই পরে তৈরি করা হলেও এসবই এই মসজিদকে অসাধারণ করে তুলেছে।

সাতৈর শাহী মসজিদের পাশে আরও আছে ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড, ১২ আউলিয়ার মাজার এবং একটি গভীর কূপ। নির্মাণের পর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে মসজিদটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লোক-কথা প্রচলিত ছিল। ফলে বিভিন্ন মানত নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এই মসজিদ দর্শনে আসেন।

সাতৈর গ্রামের সমাজকর্মী মো. জাকির হোসেন বলেন, দৃষ্টিনন্দন সাতৈর শাহী মসজিদটির পাশেই রয়েছে বাজার। মসজিদের উত্তর পাশে বাজারের অস্থায়ী কয়েকটি দোকানঘরের জন্য মসজিদটি ঠিকমতো দেখা যায় না। যদি দোকানগুলো একটু সরানো যেত তাহলে ভালো দেখাত। এ বিষয়ে ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, সাতৈর শাহী মসজিদটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি নিদর্শন। মসজিদটি পুনঃসংস্কার করায় এটির সৌন্দর্য বেড়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম