ফেলানী খাতুন হত্যার ৮ বছর, পারিবারিকভাবে মৃত্যুবার্ষিকী পালন
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৪৮ পিএম
ফেলানী খাতুন হত্যার ৮ বছর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে সোমবার।
দিনটি উপলক্ষে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নে অবস্থিত নিজ বাড়ি কলোনীটারীতে সকালে ফেলানীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও কাঙালিভোজের আয়োজন করে তার পরিবার।
রোববার রাতে লালমনিরহাট-১৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার-উল-আলম নুর ইসলামের পরিবারের খোঁজখবর নেন। বিজিবির পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল পরিচালনা ও নতুন কাপড়-চোপড়ের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন পরিবারটিকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করা ছাড়াও তাদের দেখভালের দায়িত্বের কথা জানান।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ীর উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবা নুর ইসলামের সঙ্গে মই দিয়ে কাঁটাতার বেড়া টপকে বাংলাদেশে ফেলার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে ছিল দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা।
এ হত্যাকাণ্ডে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকারকর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাদ দেয় ভারতের কোচবিহারের সোনারী ছাউনিতে স্থাপিত বিএসএফের বিশেষ আদালত। পুনঃবিচারের দাবিতে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেন। পরে বিজিবি-বিএসএফের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফেলানী হত্যার পুনঃবিচারের সীদ্ধান্ত হয়।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু করে বিএসএফ। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বিএসএফের বিশেষ আদালতে অমিয় ঘোষকে অভিযুক্ত করে পুনরায় স্বাক্ষ্য প্রদান করেন এবং অমিয় ঘোষের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
পরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর বিচারিক কাজ চলার সময় বিএসএফ আদালতে অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ৪ মাসের জন্য বিশেষ আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়েছে।
এরপর ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে দেশের সুপ্রিমকোর্টে রিট আবেদন করে।
২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর শুনানির পর ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে বারবার তারিখ পিছিয়ে যায়। ফলে থমকে গেছে ফেলানী খাতুন হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি।
ফেলানীর প্রতিবেশী পল্লী চিকিৎসক আবদুল মান্নান ও কৃষক আজমত আলী জানান, সারা বিশ্ব এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জেনেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে ফিরে গেছে। কিন্তু ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি। আমরা বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে হতাশ। এই নির্মম হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
অপরদিকে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম জানান, সরকার ফেলানীর পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও হতদরিদ্র এই পরিবারের পাশে সেভাবে দাঁড়ায়নি বলে তারা অভিযোগ করেন। এছাড়াও বারবার শুনানি পিছিয়ে যাওয়া ও বিচারকাজ আটকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে ফেলানী হত্যা ও ক্ষতিপূরণের শুনানি রিট আবেদন গ্রহণ করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়।
২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ভারতের সর্বোচ্চ আদালত আগামী ১৮ জানুয়ারি দুটি রিটের শুনানির দিন ধার্য করে। শুনানি পিছিয়ে গেলেও ফেলানীর পরিবার ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা তার।
ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তের দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট-১৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার-উল-আলম এই প্রতিবেদককে জানান, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পাওয়ার পরপরই তিনি রোববার রাতে ফেলানীর এলাকায় গিয়ে তার পরিবারের খোঁজখবর নেন। এ সময় অনুষ্ঠান পরিচালনা ও পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য ৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয় বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ফেলানীর পরিবারকে বিভিন্ন সহযোগিতা ছাড়াও জেলা প্রশাসন ও বিজিবির উদ্যোগে একটি দোকান করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তারা যখনই এসেছে তাদেরকে সহায়তা করা হয়েছে।
