বয়সের ভারে ন্যুইয়ে পড়লেও পুরোনো সহপাঠীদের পেয়ে তারা ফিরে গিয়েছিলেন কৈশোর জীবনে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘দীর্ঘ ৫৫ বছর আগে এই স্কুল থেকে মেট্রিক (এসএসসি) পাস করেছি। এরপর শিক্ষাজীবন পার করে শিক্ষকতা জীবনও শেষ করেছি। এখন অবসর জীবনযাপন করছি। নাতি-নাতনীরা এখন স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ ৫৫ বছর পর আমার স্কুল জীবনের কয়েকজন স্কুল সহপাঠীতে পেয়ে আজকের এই দিনটিকে মনে হচ্ছে আমি আবার যেনো কৈশোর জীবনে ফিরে গেছি। মনে হচ্ছে আমি এখনও এই স্কুলের ছাত্র।’
বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া যশোর এমএম (মাইকেল মধুসূধন) কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইউসুফ আলী শুক্রবার বিকালে তার স্কুল জীবনের বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মুন্সীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে আবেগাপ্লুত কন্ঠে এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬০ বছর পুর্তি উপলক্ষে শুক্রবার হীরক জয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করেছিল মুন্সীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশন।
জাককমকপুর্ণ এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল গত ৬০ বছরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। উপস্থিত হয়েছিলেন গত ৬০ বছরে এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করা ৬৮৭ জন সাবেক শিক্ষার্থী ও কয়েকজন সাবেক শিক্ষক। এদের মধ্যে অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার এসব শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গন। পরিণত হয়েছিল মিলন মেলায়। অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুইয়ে পড়লেও পুরোনো সহপাঠীদের পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন কৈশোর জীবনে। পুরোনো সহপাঠীদের দীর্ঘদিন পর কাছে পেয়ে অনেকেই একদিনের জন্য ছাত্র সেজেছিলেন তারা।
অধ্যাপক ইউসুফ আলী জানান, ১৯৬৫ সালে এই স্কুলের প্রথম ব্যাচ হিসেবে আমি মেট্রিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। এরপর শিক্ষাজীবন পার করে দিনাজপুর সরকারী কলেজ, কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছি। যশোর এম এম কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষও ছিলাম।
তিনি জানান, ২০০৫ সালে অবসর নিয়েছি। কিন্তু আজ আমার বয়স মনে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫। মনে হচ্ছে আজও স্কুল ছুটির পর স্কুলের গাছের জাম পেড়ে খাবো। কিন্তু স্কুল মাঠে সেই জামগাছটি আর নেই। জামের সময় প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পর বই রেখে জাম পেড়ে আবার বই-খাতা হাতে নিয়ে জাম খেতে খেতে বাড়ি ফিরতাম।
প্রথম ব্যাচ হিসেবে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পেছনে মরহুম এমএএম রিয়াজুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন।
শুধু অধ্যাপক ইউসুফ আলীই নন, বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও কৈশোরের প্রাণের সঞ্চারে মেতে উঠেন অনেকেই। দীর্ঘদিন পর তাদের সহপাঠীদের কাছে পেয়ে অন্যরকম আমেজে মেতে উঠেন ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এ সময় অনেকেই অনেককে অন্যরকম আমেজ নিয়ে প্রশ্ন করে ‘কিরে তুই বেঁচে আছিস?’ ‘তোর কয়টা নাতি-নাততি?’ ‘তোর মনে আছে ওই স্যারের কথা?’-এমন সব প্রশ্ন আর উত্তরে গুঞ্জনে মেতে উঠে গোটা বিদ্যালয় প্রাঙ্গন।
পুরোনো এসব শিক্ষার্থীরা এমন একটি ব্যাকিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানায়।
ওই বিদ্যালয়ের ১৯৬৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিরল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান জানান, স্কুলের সহপাঠীদের আবার দেখা মিলবে, তা কখনই ভাবিনি। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন না করা হলে হয়তো জীবনে তাদের সঙ্গে আর দেখা হতো না। এ জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬০ বছর পুর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে হীরক জয়ন্তী উৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম।
বোচাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল হাসানের সভাপতিত্বে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুন্সিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবাসি শাহ্ মো. এরশাদ হোসেন রিজ।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তসির উদ্দীন আহমেদ, সহকারী শিক্ষক মাহবুব-উল-আলম, এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল ইসলাম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. শোয়াইবুর রহমান, ড. আবু সাদ্দাত মো. সায়েম, প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ প্রমুখ।
এর আগে প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ ৬০ বছর পুর্তি উপলক্ষে হীরক জয়ন্তী উদযাপনে বিশাল শোভাযাত্রা বের করে বিদ্যালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করে। শেষে অতিথি ও সাবেক শিক্ষকদের মাঝে সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
