টেকনাফে ৪টি বাড়ি ও একাধিক স্ত্রী ছিল রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদের!
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৭:২৮ পিএম
রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদ ও তার স্মার্টকার্ড
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রোববার ভোরে টেকনাফের জাদিমোড়া এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন সম্প্রতি আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদ।
সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে নিজের কিশোরী মেয়ের রাজকীয় কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠান করিয়ে দেশবাসীর নজরে পড়েন এই রোহিঙ্গা নেতা।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির খবর অনুযায়ী, রাজকীয় কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠান হয় নূর মোহাম্মদের মেয়ের। ১ কেজি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন উপহার দেয়া হয় ওই রোহিঙ্গাকন্যাকে।
অতিথিদের দেয়া এমন উপহারে ধীরে ধীরে আয়োজকের বাড়ি স্বর্ণালংকারের স্তূপে পরিণত হয়। একইভাবে টাকায় বস্তা ভর্তি হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাস করে এই রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ আর তার এতো প্রতিপত্তির পেছনে রহস্য কি! তা জানতে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন অনেকে।
সূত্র জানায়, নুর মোহাম্মদের মালিকানায় একটি দোতলা, একটি পাকা ভবন, একটি টিনের ঘর এবং একটি বাগানবাড়িসহ চারটি বাড়ি রয়েছে। নুর মোহাম্মদের রয়েছে একাধিক স্ত্রী।
এছাড়া অবাক করা সব তথ্য দেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের আকিয়াব এলাকা থেকে বাংলাদেশে ঢুকে রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ।
এর পর হ্নীলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জাদিমুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।
কিছুদিন পর সেখানে জমি কিনে একটি বাড়ি করেন। আর সেখানে বসেই একটি শক্তিশালী সন্ত্রাস বাহিনী গড়ে তোলেন।
এসব সন্ত্রাসী দিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন।
প্রতিটি ক্যাম্পে বিয়েও করেন নুর মোহাম্মদ এবং ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড তার হাতেই সংঘটিত হতো বলে জানান চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ।
এদিকে রোববার বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর নূর মোহাম্মদের বিষয়ে বেরিয়ে আসে আরও বিস্ফোরক কিছু তথ্য।
জাদিমোড়া এলাকায় পড়ে থাকা তার মরদেহের সঙ্গে পাওয়া যায় বাংলাদেশি স্মার্টকার্ড! যেখানে তাকে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে লেখা হয়েছে।
সে এলাকায় নুর আলম নামে তিনি ভোটারও হয়েছেন।
২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সিটি কর্পোরেশনের ঠিকানায় ইস্যু করা নুর মোহাম্মদের বাংলাদেশি স্মার্টকার্ডটিতে তার নাম - নুর আলম। বাবা কালা মিয়া এবং মা সরু বেগম।
জন্মতারিখ ২৫ নভেম্বর ১৯৮৩। জন্মস্থান চট্টগ্রাম। এনআইডি নম্বর-৬০০৪৫৮৯৯৬৩।
এভাবেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছিলেন এই রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের দাবি, যুবলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি এই নূর মোহাম্মদ। সে মামলায় তাকে গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তার সঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ করে গোলাগুলি করে।
এ গোলাগুলির ঘটনায় নুর মোহাম্মদ নিহত হন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট রাতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক (৩০) একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সেদিন একদল রোহিঙ্গা ফারুককে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে পাশের একটি পাহাড়ে তুলে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে ও নুর মোহাম্মদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
ফারুক হত্যা মামলায় শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের উলুচামরী পাহাড়ি এলাকা থেকে নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করে টেকনাফ পুলিশ।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ভোরে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে জাদিমোড়া এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া বাংলাদেশি স্মার্টকার্ডধারী রোহিঙ্গা সর্দার নুর মোহাম্মদ।
