Logo
Logo
×

সারাদেশ

ফেসবুকে মাটি বিক্রি করে মাসে হাজার হাজার টাকা কামাই শাকিলের

Icon

শাহরিয়ার আলম সোহাগ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:০০ এএম

ফেসবুকে মাটি বিক্রি করে মাসে হাজার হাজার টাকা কামাই শাকিলের

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে টব বাগানের মাটি বিক্রি করেন শাকিল হোসাইন। ছবি: যুগান্তর

থরে থরে সাজানো রয়েছে মাটির পাতিল। কোনটিতে শুধুই মাটি, আবার কোনটিতে ছাদবাগানের জন্য তৈরিকৃত মাটি। নানা কিছুর সংমিশ্রণে এগুলো তৈরি করেছেন কৃষি প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটের ছাত্র শাকিল হোসাইন (২০)।

ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মাসে দুই টন মাটি বিক্রি করেন তিনি। এতে তার মাসে হাজার হাজার টাকা কামাই হয়। এই মাটি ক্রেতাদের কাছে রেডি সয়েল ও ক্যাকটাস পটিং হিসেবে পরিচিত।

পাশাপাশি শাকিল ভার্মি কম্পোস্টও তৈরি করেন। গড়ে তুলেছেন মাটির কারখানা। যে কারখানা থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটি যাচ্ছে। মাটি ক্রেতারা এই মাটি নিয়ে ছাদবাগান তৈরি করছেন।

শাকিল হোসাইন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী (কুটিপাড়া) গ্রামের নুরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে। তানজিলা আক্তার নামে তার আরেকটি ছোট বোন রয়েছে। সে আইএসটির ছাত্রী।

শাকিলের ভাষায়, মাসে দুই টন মাটি তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকেন। ফেসবুক গ্রপের মাধ্যমে তার এই মাটি ক্রয়-বিক্রয় হয়। দেশের অনেক জেলায়ই পৌঁছে গেছে সাকিলের তৈরি মাটি। এই মাটি ক্রেতাদের কাছে রেডি সয়েল ও ক্যাকটাস পটিং হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি তিনি ভার্মি কম্পোস্টও তৈরি করেন।

শাকিল জানান, ২০১৬ সালে এসএসসি পাসের পর তিনি ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটে (এটিআই) ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র। এখানে পড়ালেখা করার কারণে কৃষির প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

২০১৭ সালে নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্টে সার তৈরি শুরু করেন। অল্পদিনেই তার এই কম্পোস্ট সারের চাহিদা বেড়ে যায়। ফেসবুক এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার তৈরি সারের ক্রেতা সৃষ্টি হয়। এভাবে কিছু দিন সার বিক্রির পর ২০১৮ সালের গোড়ার দিকে ছাদবাগান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

শাকিল জানান, কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ডে তার বাবার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। যার পাশেই একটি তিনতলা ভবন আছে। যে ভবনে ইসলামী ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। তিনি ওই ভবনের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সেখানে ছাদবাগান তৈরির কাজ শুরু করেন। মাত্র ৬ মাসের মধ্যে তার ছাদবাগানটি দর্শনীয় হয়ে ওঠে। ভবনের চারপাশে নানা প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ লাগান, যা এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবনটিকে ঠাণ্ডা করে দেয়।

এই ছাদবাগান করতে গিয়ে তাকে মাটি ব্যবহার করতে হয়। এই মাটি কীভাবে উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করে ছাদবাগানের উপযোগী করা যায়, সেটি নিয়েও তিনি বইপত্র পড়াশোনা করেন। একপর্যায়ে তার তৈরি মাটিতে তর তর করে গাছগুলো বেড়ে ওঠে। এর পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন উর্বর শক্তিসম্পন্ন এই মাটি তৈরি করবেন এবং যারা ছাদবাগান তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন, তাদের মাঝে বিতরণ করবেন।

মাত্র কয়েকজনকে এই মাটি সরবরাহের পর তার মাটির চাহিদা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কেনার প্রস্তাব আসতে শুরু করে। তখন তিনি জোরেশোরে মাটি তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন।

শাকিল আরও জানান, প্রথমে তিনি নিজ এলাকা থেকে বেলে-দোঁআশ মাটি সংগ্রহ করেন। এই মাটি কয়েক দিন রেখে দেন এবং এই শুধু মাটিই নানাভাবে মিশ্রণ করেন। তার পর চালনি দিয়ে চেলে ময়লা আলাদা করে নেন। এর পর ওই মাটিতে তিনি পরিমাণমতো বালি, ভার্মি কম্পোস্ট সার, চুন, কোকোডাস্টসহ কয়েকটি উপাদান ছিটিয়ে দেন। তার পর কয়েক দফা মিশ্রিণ করার পর তৈরি হয়ে যায় তার ছাদবাগানের মাটি।

২০১৮ সাল থেকে তিনি দুই ধরনের মাটি তৈরি করে যাচ্ছেন। রেডি সয়েল ১২ টাকা কেজি আর ক্যাকটাস পটিং সয়েল ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এভাবে শুধু মাটি তৈরি আর বিক্রি করে তিনি মাসে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা আয় করেন। এ ছাড়া ভার্মি কম্পোস্ট সারে তার পৃথক আয় রয়েছে।

তিনি জানান, প্রতিদিনই তার মাটি দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। প্রতিটি ২৫ কেজির বস্তা মাটি কুরিয়ারের মাধ্যমে সব স্থানে পাটিয়ে থাকেন। তার ভাষায় প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ টন মাটি তিনি বিভিন্ন স্থানে পাঠান।

হবিগঞ্জের পুরনো হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা পলাশ চন্দ্র জানান, তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে মাটি নিয়েছিলেন। শাকিল হোসেনের তৈরি করা মাটি দিয়ে তিনি ছাদবাগান করেছেন।

তিনি জানান, জৈব সার, কোকোডাস্টসহ অন্যান্য উপাদান ঠিকমতো থাকায় এই মাটি যথেষ্ট উর্বর ও জৈব। এটার সন্ধান পেয়ে তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এই মাটি নিয়েছেন। এখানে আরও যারা ছাদবাগান করেছেন, তারাও শাকিলের নিকট থেকে মাটি ক্রয় করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, তারা এই কারখানা পরিদর্শন করেছেন। তা ছাড়া ছেলেটি তরুণ উদ্যোক্তা। তার মতো তরুণ উদ্যোক্তা দিয়ে অনেক কিছুই সম্ভব, তারাও শাকিল হোসাইনের কাছে অনেক কিছুই আশা করেন।

কালীগঞ্জ মাটি শাকিল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম