কাস্টমস কমিশনারের স্ট্যাটাসে ‘করোনা রোগী’ শনাক্তের গুজব!
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০২:৪৮ পিএম
কাস্টমস কমিশনারের স্ট্যাটাসে ‘করোনা রোগী’ শনাক্তের গুজব
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের গুজব ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা ফেরত বন্ধন এক্সপ্রেসের এক যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয় ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগের টিম যাত্রীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ পায়নি।
দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার ফেসবুক পেজে গুজব ছড়ানোয় বিব্রত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বিকালে সিভিল সার্জন সংবাদ সম্মেলন করে গুজবের বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরী বলেন, সচেতনতার জন্যই প্রথমে করোনা রোগী শনাক্তের বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। পরে চিকিৎসক দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে ওই যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস নেই। পরে আবার আপডেট স্ট্যাটাস দিয়েছি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়াইনি। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা তৎপর ছিলাম।
নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরীর ফেসবুক আইডিতে বেনাপোল স্থলবন্দরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে দাবি করে স্ট্যাটাস প্রচার করা হয়েছে। যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এটি নিছকই গুজব। এ ধরনের গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।
সিভিল সার্জন উল্লেখ করেন, জহিরুল ইসলাম নামে একজন পাসপোর্ট যাত্রী ১৯ ফেব্রুয়ারি দর্শনা বন্দর হয়ে কলকাতায় গমন করেন। তিনি আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা থেকে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে সকাল ১০টার দিকে বেনাপোল রেলওয়ে ইমিগ্রেশনে পৌঁছান। বেনাপোল স্থলবন্দরে অবস্থিত স্বাস্থ্য বিভাগীয় মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য ও ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। তাকে ইনফ্রারেড হ্যান্ড হেড থার্মাল স্ক্যানার দ্বারা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিক পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ও লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি। ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনে অবস্থান করেন। ৩১ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। বাংলাদেশে ফেরার পর তিনি নিজ বাড়ি কুমিল্লায় ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে ছিলেন।
অপর এক যাত্রী রাজবাড়ীর সুমিত ভৌমিক ১০ জানুয়ারি চীন ভ্রমণে যান। সেখান থেকে ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফেরেন। বাংলাদেশে ফেরার পর নিজ বাড়ি রাজবাড়ীতে ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে ছিলেন। তার শরীরেও করোনাভাইরাসে কোনো উপসর্গ ও লক্ষণ মেলেনি।
সিভিল সার্জন বলেন, ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দরে ৭৫ হাজার ৩৩৫ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। কারো শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ও লক্ষণ মেলেনি।
পাসপোর্ট যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাকারী শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, ওই যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ ও লক্ষণ পাওয়া যায়নি। ইন্সটিটিউট অব এপিডেমোলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) হটলাইন নম্বরে কথা বলে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তাদের পরামর্শে ওই যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
যা ছিল বেলাল চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে‘... বন্ধন এক্সপ্রেসে থেকে একজন করোনাভাইরাসের রোগী সন্দেহে আলাদা করা হয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা রেলের নিয়মিত দায়িত্ব পালনকালে একজন বিশ্বস্তসূত্রে গোপন সংবাদ পায় এবং রোগীকে শনাক্ত করেন। তাৎক্ষণিক এসি উত্তম চাকমা ও আকরাম হোসেন বিষয়টি যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসকে জানায় এবং সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও নজরে আনে! ...
গত ২৯ জানুয়ারি বেনাপোল কাস্টম হাউস এ অঞ্চলে প্রথম করোনাভাইরাস সচেতনতা সভা করে। উপজেলা স্বাস্থ্য দফতর প্রধান ও সিভিল সার্জন সহায়তা দেন। বিস্ময়কর হলেও #বেনাপোল-কাস্টম-হাউস কর্মকর্তাদের তৎপরতায় এ অঞ্চলে #প্রথম করোনা-রোগী-দেশে-ঢোকার-আগেই ধরা পড়ে। যে কেউ এমন রোগী দেখলে চিকিৎসক টিমকে জানান!
রোগী যথাযথ পরিচর্যায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। অবহেলায় উল্টোটা ঘটে ভাইরাস ছড়িয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই। আল্লাহ মহামারী থেকে আমাদের হেফাজত করুন। সবাই সতর্ক থাকুন! সচেতন থাকুন। পোস্টটি কেবল সচেতনতার জন্য প্রদত্ত! স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যথার্থ সিদ্ধান্ত নিবেন।’
যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত বিষয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
