Logo
Logo
×

সারাদেশ

সাপাহারে ৩৮ বছর পর নুরুজ্জামানের ঘরে ফেরায় ফতোয়া, অতঃপর...

Icon

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৫৯ পিএম

সাপাহারে ৩৮ বছর পর নুরুজ্জামানের ঘরে ফেরায় ফতোয়া, অতঃপর...

৩৮ বছর পর স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে নুরুজ্জামান

নওগাঁর সাপাহারে বাবার ওপর অভিমান করে নিরুদ্দেশ হওয়া নুরুজ্জামান (৬০) নামে এক ব্যক্তি  ৩৮ বছর পর বাড়ি ফিরেছেন। এতে ওই পরিবারে যেন আনন্দের বন্যা বইছে।

তবে উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নে দক্ষিণ আলাদীপুর গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি দীর্ঘদিন পর তার ফিরে আসাকে ফতোয়া দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বাঁধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।

পরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বুধবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে এলাকাবাসীকে তাদের ভুলের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। এতে স্বামী-স্ত্রীর ওই পরিবারে একত্রে বসবাসের কোনো সমস্যা নেই বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ আলাদীপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাকের ছেলে নুরুজ্জামান। তিনি ১৯৮২ সালে পারিবারিক দ্বন্দ্বে বাবার ওপর অভিমান করে স্ত্রী আরিফন বিবি, নাবালক দুই ছেলে ও সংসার রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সে সময় স্ত্রী এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাননি। তিনি হয় ভারতে চলে গেছেন অথবা মারা গেছেন। এমন ধারণা করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

নুরুজ্জামানের স্ত্রী আরিফন বিবি সন্তানদের নিয়ে উপজেলার কৃষ্ণসদা গ্রামে তার বাবার বাড়িতে চলে যান। দ্বিতীয় বিয়ে না করে স্বামীর পথ চেয়ে বাবার বাড়িতে সন্তানদের লালন-পালন করেন। ইতিমধ্যেই তার সন্তানরা বিয়ে করে মাকে নিয়ে সংসার করছেন।

দীর্ঘ ৩৮ বছর পর সোমবার দুপুরে হঠাৎ করে নুরুজ্জামান তার বাবার বাড়ি দক্ষিণ আলাদিপুর গ্রামে ফিরে আসেন। তার গ্রামে ফিরে আসায় নুরুজ্জামানকে নিয়ে এলাকায় বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। ঘটনাটি জানতে পেয়ে স্ত্রী আরিফন বিবি তার স্বামীকে দেখতে আসেন।

স্বামীর দীর্ঘদিন পর ফিরে আসায় যেন এ আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দু'জনের মধ্যে আনন্দের অশ্রু ঝরতে থাকে। এলাকাবাসী তাদের দেখতে ভিড় জমান।

এ দিকে নুরুজ্জামান দীর্ঘদিন পর ফিরে আসাকে কতিপয় ব্যক্তি ফতোয়া দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাঁধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ১২ বছর সম্পর্ক না থাকলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বন্ধনের বিচ্ছেদ ঘটে বলে ওই গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি ফতোয়া দেয়। পরে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে বললে তাদের ভুল ধারণা ভেঙে যায়।

এ বিষয়ে নুরুজ্জামান বলেন, তিনি তার বাবার ওপর অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এরপর রংপুর শহরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। ১৯৮৫ সালের দিকে আর বাড়িতে ফিরবেন না প্রতিজ্ঞা করে সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন করে সংসার পাতেন। সেখানে সংসারে তিন ছেলে আছে। নিজ বাড়িতে ফিরার ইচ্ছা থাকলে বিভিন্ন কারণে আর ফিরা সম্ভব হয়নি। এখন তিনি দুই সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান। প্রথমে এলাকাবাসী কিছু গুজব ছড়ালেও পরে তা ঠিক হয়ে যায়।


স্ত্রী আরিফন বিবি বলেন, দীর্ঘদিন পর স্বামী ফিরে আসায় তিনি খুশি। এ নিয়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন কথা শুনিয়েছেন। এখন তিনি তার স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চান। এখন স্বামী-সন্তানদের নিয়ে একত্রে বসবাস করতে চান।

এ বিষয়ে গোয়ালা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান মুকুল বলেন, কোনো ফতোয়াবাজীর ঘটনা ঘটেনি। গ্রামের কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়েছিল। পরে বুধবার বিকাল ৫টার দিকে ইউএনও ও ওসি গিয়ে বিষয়টি দেখে এসেছেন। নুরুজ্জামান তার পরিবারের সঙ্গেই আছে। বর্তমানে শ্বশুরবাড়ি হাঁপানিয়াতে আছে।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, সেখানে ফতোয়াবাজীর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তারা স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানরাসহ সেখানে আসছিল। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি বলে তারা জানান।

নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া মহল্লার উত্তরপাড়া জামে মসজিদের খতিব হাফেজ নুরুল ইসলাম নাদিম বলেন, যেহেতু কেউ কাউকে তালাক দেয়নি বা দীর্ঘদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। তার পরও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বহাল আছে। নতুন করে বিয়ে পড়ানোর কোনো দরকার নেই। তবে এলাকাবাসী যে ফতোয়া দিয়েছেন, এটা একটা কুসংস্কার। তবে সমস্যা হতো- ‘যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়কে তালাক দিয়ে আলাদা সংসার করত।’

নওগাঁ ফতোয়া

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম