Logo
Logo
×

সারাদেশ

বরিশালে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে ফেঁসে গেলেন অভিযোগকারী

Icon

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৫:২৮ পিএম

বরিশালে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে ফেঁসে গেলেন অভিযোগকারী

দেড় লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে থানায় মামলা করতে গিয়ে অভিযোগকারী নিজেই ফেঁসে গেছেন।

অভিযোগকারীর দাবি অন্যের বুদ্ধি নিয়ে তিনি এ কাজ করছেন। তবে ঘটনার রহস্য উম্মোচন করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হলেও মারামারির বিষয়টি সামনে আসায় থানা পুলিশ উভয়পক্ষের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় বরিশাল নগরীর লুৎফর রহমান সড়কে বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তরের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. খায়রুল আলম।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানাধীন হরিনাফুলিয়ার নতুন হাটখোলা এলাকার হারুন মোল্লার ছেলে ও গরুর ব্যবসায়ী মো. পান্নু মোল্লা একটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে আসেন।

লিখিত ওই অভিযোগে তিনি দাবি করেন, বুধবার বেলা সাড়ে ৮টার দিকে পান্নু মোল্লা গরু কেনার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে সোনামিয়ার পোল সংলগ্ন এলাকায় জনৈক আউয়াল সিকদারের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে খান বাড়িরপোল এলাকায় পৌঁছালে তিনজন লোক মোটরসাইকেলযোগে এসে তার গতিরোধ করে এবং তাকে কিল-ঘুষি মারে। পরে একজন পকেট থেকে চাকু বের করে ভয় দেখিয়ে সঙ্গে থাকা গরু কেনার ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু এরইমধ্যে পান্নু মোল্লা ছিনতাইকারীদের মধ্যে মো. মাসুম (২৫) নামে একজনকে চিনতে পারেন। যিনি এয়ারপোর্ট থানাধীন কটুরাকাঠি এলাকার বাদল খানের ছেলে ও পেশায় মুদি ব্যবসায়ী।

লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, যদি অভিযোগদাতা পান্নু মোল্লা এই কথা কাউকে বলে তাহলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ছিনতাইকারীরা।

উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. খাইরুল আলম জানান, অভিযোগের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে নেমে কথিত ছিনতাইকারী মো. মাসুমকে আটক করা হয়।

আটকের পর মাসুম দাবি করে, তার খালাতো ভাই শাহাদাত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রায় ১৫ দিন পূর্বে শাহাদাতের অটোরিকশায় অভিযোগকারী পান্নু মোল্লা সোনামিয়ার পোল এলাকা থেকে নতুনহাটে যান। সে সময় ভাড়া ৮ টাকা চাইলে পান্নু মোল্লা ৩ টাকা বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন। কিন্তু এ ৮ টাকা ভাড়া অটোরিকশা চালক-শ্রমিক সমিতি নতুন করে নির্ধারণ করেছে জানালেও পান্নু মোল্লা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।

তিনি জানান, এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে চালক শাহাদাতকে মারধর করে পান্নু মোল্লা। যে ঘটনা শাহাদাত এসে তার খালাতো ভাই ও মুদি ব্যবসায়ী মো. মাসুমকে বলেন। এরপর মাসুম ও শাহাদাত মিলে বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পান্নু মোল্লার কাছে যান। কিন্তু পান্নু মোল্লা লোকজন নিয়ে তাদের উভয়কে মারধর করে পাঠিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে মাসুম ব্যবসায়ী পান্নু মোল্লাকে মারধরের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার সকালে নিজ এলাকায় পান্নু মোল্লাকে পেয়ে মাসুম তার সহযোগীদের নিয়ে পান্নুকে মারধর করেন। তবে ছুরি দিয়ে ভয় দেখানো কিংবা টাকা পয়সা ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় মাসুম।

এরপর মাসুমের দেয়া তথ্যানুযায়ী অভিযোগকারী পান্নু মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, পাশাপাশি টাকার উৎস (উত্তোলিত ব্যংক বা ব্যক্তির তথ্য) সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়। এর পরপরই পান্নু মোল্লা তার দেয়া অভিযোগে উল্লেখকৃত ছিনতাইয়ের ঘটনা মিথ্যে বলে স্বীকার করেন।

তিনি জানান, মারধরের প্রতিশোধ নিতে অন্য মানুষের কথায় তিনি মিথ্যে ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেন।

উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. খায়রুল আলম জানান, মামলা দেয়ার আগে অভিযোগটি খতিয়ে দেখায় মূল ঘটনার রহস্য উদঘাটন হল। তবে প্রাথমিক তদন্তে যেহেতু উভয়ই মারামারি সংগঠিত হওয়া এবং বাদীর মিথ্যে ছিনতাইয়ের অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে, তাই মেট্রো অধ্যাদেশ অনুযায়ী পুলিশই উভয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন এডিসি (উত্তর) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, এয়ারপোর্ট থানার এসআই মাইনুল ইসলামসহ থানা পুলিশের সদস্যরা।

ছিনতাই প্রতিপক্ষ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম