কেরানীগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
আবু জাফর, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৩১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কেরানীগঞ্জে দিনদিন করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এদিন নতুন করে কালিন্দী ইউনিয়নের স্কুল রোডের পাশে ৩৫ বছরের এক ব্যক্তি ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ধরা পড়ে।
গত ৫ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সপ্তাহের ব্যবধানে শনিবার আক্রান্তের সংখ্যাা দাড়িয়েছে ১৬। সংক্রমন ঠেকাতে ইতিমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে ৫টি ইউনিয়ন। তারপরও আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ জানান, ঢাকার উপকণ্ঠ হওয়ায় কেরানীগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়ন অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। জনসংখ্যার অধিক ঘনত্বের কারণে ঝুঁকিটাও অত্যন্ত বেশি। এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় একটা অংশই সরকারি নির্দেশনা না মেলে ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করেছেন, রাস্তায় জমায়েত হয়েছেন। এসব কারনে কেরানীগঞ্জে করোনার সংক্রমন ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু থেকে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলাসহ সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এজন্য অনেককে জেলা জরিমানাও করা হয়েছে।
জানা যায়, ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কেরানীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০ লাখ লোকের বসবাস। এর মধ্যে শুভাঢ্যা, আগানগর, জিনজিরা, কালিন্দী ইউনিয়ন অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ন। প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের যাতায়াত রাজধানীতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মোবারক হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, কেরানীগঞ্জের যারা আক্রান্ত হয়েছেন আমরা তাদের প্রোফাইল চেক করেছি। আক্রান্ত কারো বাড়িতেই প্রবাসী কেউ আসেনি। এমনকি তারা প্রবাসী কারো সংস্পর্শেও আসেননি। এর মানে হচ্ছে তারা প্রবাসীর দ্বারা আক্রান্ত কারো মাধ্যমে (এটা একাধিক লোকও হতে পারে) সংক্রমিত হয়েছেন। এটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ৪১জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ২৯ জনের পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এতে ৭ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। আক্রান্ত বাকিরা নিজেদের উদ্যোগে আইইডিসিআর এর সহায়তায় রিপোর্ট করিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহ করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি টিম রয়েছে। এতে করে বেশি সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। যেকোন উপায়ে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। এজন্য আমরা বেশকিছু বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
গত ৫ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের জিনজিরা মডেল টাউন এলাকায় প্রথম ব্যক্তির শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ৬ এপ্রিল শুভাঢ্যার হিজলতলা, জিনজিরার রহমতপুর ও বাগে ৩ জন আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়।
পরদিন আক্রান্তের কোন খবর পাওয়া না গেলেও ৮ এপ্রিল ৪ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদিন আক্রান্ত হন কালিন্দীর বরিশুর, শুভাঢ্যার বেগুনবাড়ি ও জিনজিরার গোলজারবাগের দুজনসহ ৪ জন। এদের মধ্যে গোলজারবাগে এক নারী ও তার ছেলে আক্রান্ত হয়। এর দুদিন আগে ওই নারীর স্বামী করোনা ধরা পড়ে। ৯ এপ্রিল কোন্ডার দোলেশ্বর, শুভাঢ্যার বেগুনবাড়ি ও কালিগঞ্জের ৩ জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়। এরপর ১০ এপ্রিল আরো ৩ জনের শরীরে করোনার সংক্রমন ধরা পড়ে। সর্বশেষ শনিবার কালিন্দী স্কুলে রোডর ৩৫ বছরের এক ব্যক্তি ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ৫৩ বছর বয়সী একজনের শরীরে করোনার সংক্রমন ধরা পড়ে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান সোহেল জানান, কেরানীগঞ্জের বেশিরভাগ ইউনিয়নই অত্যন্ত জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ। বিশেষ করে শুভাঢ্যা, আগানগর, জিনজিরা, শাক্তা ও কালিন্দী ইউনিয়নে সংক্রমনের ঝুকিটা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই এই ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দা। ঝুঁকি ও নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে এই ৫টি ইউনিয়ন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
