ফরিদপুরে পিটিআই সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০, ০২:২৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) ফরিদপুরের সুপারিন্টেনডেন্ট কুব্বাত আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে তিনি দুর্নীতি চালিয়ে গেলেও কেউই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
নানাবিধ দুর্নীতি এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নানাভাবে হয়রানির কারণে ক্ষোভ বিরাজ করছে পিটিআইএ ট্রেনিংয়ে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে। দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের বিষয়ে কেউ মুখ খোলার চেষ্টা করলেই তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখেন। পিটিআইয়ের কর্মকর্তা হয়েও তিনি প্রায় সবার সঙ্গে অভদ্র আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, কুব্বাত আলী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি চলতি দায়িত্ব নিয়ে ফরিদপুর পিটিআইয়ে যোগদান করেন। পরে তিনি সুপারিন্টেনডেন্টের দায়িত্ব পান। এরপর থেকেই তিনি নানাভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, পিটিআইতে ভাঙ্গা স্থাপনা সরানোর জন্য বিভিন্ন খাতের থাকা টাকা এ খাতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যয় করেন। হোস্টেলে থাকা শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কেটে নেয়া ৩০০ টাকা হোস্টেলের উন্নয়ন খাতে ব্যয় না করে তার ক্ষমতাবলে ইচ্ছে মতো ব্যয় করেন। পিটিআইয়ের ভেতরে একটি পুকুরে মাছ চাষের কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিলেও তাদের কোনো লভ্যাংশ কিংবা টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো কিংবা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে হোস্টেলে থাকা শিক্ষকদের দিয়ে কাজ করানো হয়। কেউ কাজ করতে রাজি না হলে তাদের অপমানসূচক কথা বলে শাসানো হয়। কোনো নিয়ম না থাকলেও বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। মসজিদের উন্নয়নের নামে চাঁদা তুলে তা নিজের ইচ্ছামতো খরচ করা হয়।
ট্রেনিং নিতে আসা শিক্ষকরা যারা হোস্টেলে থাকেন না তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। পিটিআইএ থাকা শিক্ষক ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সব সময়ই অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন।
ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে যা ইচ্ছে তাই করছেন। তিনি নিজের ক্ষমতাবলে নিয়মবহির্ভূতভাবে একজন গেটম্যান রেখেছেন, যার বেতন কৌশলে শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করে থাকেন। পানির পাম্পের মিটার সংযোগ দেয়া হয়েছে হোস্টেলের মিটার থেকে। ফলে হোস্টেলে অবস্থান করা শিক্ষকদের কাছ থেকে বাড়তি বিল নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে পিটিআইএ কর্মরত ইনস্ট্রাক্টরদের হোটেলে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।
কুব্বার আলীর দুর্নীতির বিষয়ে কেউ টু শব্দ করার চেষ্টা করলে তাকে বদলির ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। এ ছাড়া প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকের কেউ তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে ভাইবা পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে হোস্টেলের কোনো উন্নয়ন না করলেও বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়া হয়।
প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কুব্বাত আলী নিজেকে সব সময় উচ্চ মাপের একজন মানুষ মনে করেন। তার কাছে আমরা সবাই হল ‘গরীবের বাচ্চা’। সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যেন তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বিভিন্নভাবে হোস্টেলের উন্নয়ন করার কথা বলে অতিরিক্ত টাকা নিলেও হোস্টেলের কোনো উন্নয়ন করেননি। হোস্টেলের বাথরুম, গোসলখানাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী রয়েছে।
অভিযোগ করে অনেকেই বলেছেন, প্রতিমাসে (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষে সংস্থাপনে আদায় হতো ৭৮ হাজার টাকা। যা শুধু হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিল আর রান্না করার বুয়ার বেতন দেয়া হতো। বাকি টাকার কোনো হিসাব প্রশিক্ষণার্থীদের দেয়া হয় না। যদিও মাসিক হিসাবে সব খরচের হিসাব দেয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রতিমাসে সংস্থাপনে আদায় হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা ওইভাবেই ব্যয় করা হয়। বাকি টাকার কোনো হিসাব নেই।
পিটিআই বাউন্ডারি সংলগ্ন রাস্তার পাশে দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু চা দোকানি, পান দোকানি দোকান করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ায় তারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। পিটিআইয়ের ভেতরে বেশ কিছু গাছ ছিল, যা বনবিভাগের কোনো অনুমতি না নিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে।
দুর্নীতিবাজ সুপারিন্টেনডেন্ট কুব্বাত আলীর বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে পিটিআই সুপারিন্টেনডেন্ট কুব্বাত আলীর সঙ্গে কথা বলতে পিটিআই কার্যালয়ে গেলে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি এখন আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারব না। আমার এখন অনেক কাজ রয়েছে। আপনারা পরে আসতে পারেন।
