Logo
Logo
×

সারাদেশ

ফরিদপুরে ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

Icon

ফরিদপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ০১:২৮ পিএম

ফরিদপুরে ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

এলাকায় নব্য আওয়ামী লীগের কতিপয় স্বার্থবাদী নেতাদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসা. দেলোয়ারা বেগম।

তালমা ইউপি চেয়ারম্যান তার দুই ছেলে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও রুকসুর সাবেক এজিএস জামাল হোসেন মিয়া এবং ফরিদপুর জেলা পরিষদের সদস্য কামাল হোসেন মিয়াকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

শনিবার বেলা ১১টায় ফরিদপুর শহরের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তিনি নানা অভিযোগ এনে এর প্রতিকার চেয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে মোসা. দেলোয়ারা বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন মিয়া। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার স্বামী (জামাল হোসেনের বাবা) বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবু শহীদ মিয়া তালমা ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি নগরকান্দা উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যুদ্ধকালীন নগরকান্দা উপজেলার কমান্ডার ছিলেন। 

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ মাতৃকার টানে নিজের জীবনকে বাজী রেখে দীর্ঘ ৯ মাস রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা জন্মগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আর্দশে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ করে আসছি। আমার ছেলে অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। 

এ ছাড়া নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত এজিএস ছিলেন। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ যমুনা গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) পদে কর্মরত। 

আমার আরেক ছেলে কামাল হোসেন মিয়া ফরিদপুর জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। নগরকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন। আমার এ দুই ছেলে জন্মগতভাবে ও পারিবারিক সূত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ করে আসছে। 

বিগত ১/১১-এর সময় অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নগরকান্দা উপজেলায় একমাত্র তালমায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য জীবনবাজি রেখে আমার দুই ছেলের নেতৃত্বে মিটিং এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে। প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের পরিবার নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করে আসছে। 

সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাত-দিন পরিশ্রম করে আমাদের প্রিয় নেত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে ভূমিকা রেখেছি। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবং আমার তালমা ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করতে আমার দুই ছেলে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। 

আমার ছেলে জামাল হোসেন মিয়া ও কামাল হোসেন মিয়া শত বাধা-বিপত্তি, হামলা-মামলাকে উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমানত নৌকা প্রতীকের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনা করেছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মনিরুজ্জামান সরদার এবং আমি দেলোয়ারা বেগম বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হই। 

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আপনারা অবগত আছেন যে, গত উপজেলা নির্বাচনে ও তালমা ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে আমাদের মাননীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থিত নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে যথাক্রমে নগরকান্দা উপজেলায় কাজী শাহ জামান বাবুল, সালথা উপজেলায় ওয়াদদু মাতুব্বর, তালমা ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে নগরকান্দা উপজেলা পিস কমিটির সদস্য মরহুম মকবুল খানের ছেলে, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. ফিরোজ খানকে সমর্থন করেন।

ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ত্যাগী, পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ সাধারণ জনগণকে ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি, নৌকা প্রতীকের মিছিল-মিটিং ও জনসভায় হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেনের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়াদুদ মাতুব্বরকে জয়লাভ করান। 

নগরকান্দা ও তালমার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়লাভ করে। সে ক্ষেত্রে নানা ষড়যন্ত্র করেও নৌকার বিজয় তারা ছিনিয়ে নিতে পারেনি। নগরকান্দা ও তালমায় শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর প্রার্থীরা হেরে যায়। সেই শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী আমার দুই ছেলে জামাল হোসেন মিয়া ও কামাল হোসেন মিয়াসহ আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাতে থাকে। 

আমার দুই ছেলেসহ আমার নেতা-কর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলা, বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ অনেক নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। গত ১৫ মার্চ আমার ছেলে কামাল হোসেন শাকপালদিয়ায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ‘মামা বাহিনী’ অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে আমার ছেলেসহ তার সফর সঙ্গীদের কুপিয়ে জখম করে। গাড়ি ভাংচুর করে। 

বিগত ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই রাতে আমার বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গত ১৯ জুন তালমার মোড়ে আওয়ামী লীগের অফিসে ‘মামা বাহিনী’ অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করে। অফিসের টেবিল-চেয়ার ভাংচুর করে। দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন আবু পাটোয়ারীসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। 

দীর্ঘ লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে জামাল হোসেন মিয়া গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, তালমা ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার ফলশ্রুতিতে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী আমার দুই ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা, হামলা, হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’-এ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করে আমার পরিবারকে মানসিক ও সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। 

আমাদের একটাই অপরাধ, আমরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করি এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দেই। ২০০১ সালে চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসার পর নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার অপরাধে আমার দুই ছেলেসহ আমাকে বিএনপি নেতা ফিরোজ খানের নেতৃত্বে অত্যাচার চালায়। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের বাড়িছাড়া করা হয়। 

এবার লাবু চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ‘মামা বাহিনী’র সেকেন্ড ইন কমান্ড হয়েছে সেই বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। ‘মামা বাহিনীর’ অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে অনেকেই এখন এলাকাছাড়া রয়েছে। অনেক আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। হামলা-মামলার ভয়ে ত্যাগী বহু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে। 

দেলোয়ারা বেগম প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি, আমরা নৌকায় ভোট দেই এই যদি আমাদের অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই, কেন এই অত্যাচার। কেন এই হামলা। আমরা তো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করতেই কাজ করছি। 

তাহলে আমার পরিবারের উপর কেন বারবার আঘাত হানা হচ্ছে। আর যারা আঘাত হানছে তারা জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা স্বার্থবাদী নেতা। আওয়ামী লীগের কতিপয় দুষ্টলোকের ঘাড়ে ভর করে বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা লোকের যেভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, অত্যাচার চালাচ্ছে তাতে করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিই লাভবান হচ্ছে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। 

আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাই, নগরকান্দা-সালথার দিকে আপনি খোঁজ নেন। দলের নেতা-কর্মীরা ভালো নেই। স্বাধনতাবিরোধীরা রামরাজত্ব কায়েম করে রেখেছে এ এলাকায়। যারা এ সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের দ্রুত আটক করে বিচার করুন। নইলে আওয়ামী লীগকে নগরকান্দা-সালথায় বাঁচানো যাবে না। তিনি ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে নগরকান্দা-সালথা উপজেলার আওয়ামী লীগের কয়েকশ' নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
 

ফরিদপুর সংবাদ সম্মেলন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম