Logo
Logo
×

সারাদেশ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতে পণ্য পরিবহনে প্রস্তুত আখাউড়া

Icon

মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০২:১৮ পিএম

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতে পণ্য পরিবহনে প্রস্তুত আখাউড়া

বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নৌপ্রটোকল ট্রান্সশিপমেন্ট ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ (পিআইডব্লিউব্লিউটিটি) চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম নৌবন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে প্রস্তুত আখাউড়া স্থলবন্দর।

আখাউড়া কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট হারুন উর রশিদ এমন তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পরীক্ষামূলক প্রথম চালানের পণ্য ভারতের ত্রিপুরায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এ জন্য কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতিই নিয়েছে। 

আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আশা করা হচ্ছে মঙ্গলবার সকালে পণ্যবাহী ট্রেলার বন্দরে প্রবেশ করবে। পণ্যবোঝাই ট্রেলারগুলো বন্দরে আসার পর দ্রুত সময়ে ছাড় দেয়া হবে।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-আগরতলা আন্তর্জাতিক মহাসড়কের আখাউড়া অংশে পৌর শহরের বাইপাস বঙ্গবন্ধু স্কয়ার মোড় থেকে পশ্চিমে মহাসড়কের মাঝখানে বড় একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একই সড়কের অন্য অংশে সড়কের মাটি সড়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর মধ্যে ওই সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছে। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

তবে এ মহাসড়কে ভারী যান চলাচলে এখন কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক। তিনি বলেন, পণ্যবাহী ভারী যান চলাচলে ঢাকা-আখাউড়া-আগরতলা এ মহাসড়কটি উপযোগী আছে। মেরামতের পর শনিবার ও রোববার আখাউড়া স্থলবন্দরগামী পণ্যবোঝাই ভারী যান চলাচল করেছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ‘ভারত তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর প্রথমবারের মতো ব্যবহার শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পণ্যবাহী চারটি কনটেইনার দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে আসছে ভারত। কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর থেকে চার কন্টেইনার পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর ফেলে বাংলাদেশি একটি জাহাজ এমভি সেঁজুতি। পরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে চালান দুটির শেষ গন্তব্য ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তবে যে চার কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন হবে সেগুলো ভারতের সিজে ডার্সেল লজিস্টিকস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরও জানা গেছে, চার কন্টেইনারের দুটিতে রয়েছে স্টিলসিড (রড) এবং অপর দুটিতে রয়েছে ডাল। চালান দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের কন্টেইনার পরিবহনকারী গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে সড়কপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলার উদ্দেশে সোমবার রওনা হবে। মঙ্গলবার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে আগরতলা স্থলবন্দর থেকে খালাসের পর রডের চালান নেয়া হবে পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়ায়। চালানটি ভারতের এস এম কর্পোরেশনের।

অপরদিকে আগরতলায় ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট বা আইসিপিতে খালাস করে ডালের চালান ভারতীয় ট্রাকে করে আসামের করিমগঞ্জে জেইন ট্রেডার্সের কাছে নেয়া হবে। এটি হবে চট্টগ্রাম বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম।

আখাউড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাশুল আদায় করবে কাস্টমস।

তবে পরীক্ষামূলক চালানে পণ্য পরিবহন বাবদ ভাড়া ও বাংলাদেশ অংশে প্রস্তাবিত বিভিন্ন মাশুল পাবে বন্দর, কাস্টমস এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ভারতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। এই সাতটি হল প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাশুল ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিলের মাশুল প্রযোজ্য হবে।

নির্ধারিত সাতটি মাশুল বাবদ বাংলাদেশ কনটেইনারপ্রতি ৪৮-৫৫ ডলার পাবে। আর সড়কপথে পণ্য পরিবহন ভাড়া পাবে বাংলাদেশি পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান। এই রুটটি নিয়মিত করতে পরীক্ষামূলকভাবে কী কী সমস্যা হয় সেগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের পর নিয়মিত রুট হিসেবে চালু হবে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে এ সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা এসওপি সই হয়। নানা জটিলতা শেষে দেড় বছরের বেশি সময় পর ভারতীয় পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

বাংলাদেশ ভারত বন্দর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম