|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের বড় বড় মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াই ছিল হবিগঞ্জের প্রতারক আফজলের পুঁজি। অবশেষে সে পুলিশের খাঁচায় বন্দি হয়েছে।
বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর থানা পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
আফজলের বিরুদ্ধে চাকরি দেয়া, ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়া, বদলি বাণিজ্য, বিদেশে লোক পাঠানোসহ নানা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সে নির্বিঘ্নেই প্রতারণা চালাচ্ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসকের বাংলোয় গোপনে ঢুকে ছবি তুলে তা ফেসবুকে পোস্ট করলেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে ধরা পড়ে মুচলেকা দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। গ্রেফতারের পর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গোপনে জেলা প্রশাসকের বাংলোতে প্রবেশ করে প্রতারক আফজল হোসেন। বাংলোতে চেয়ারে বসে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে। রাতেই বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের। পরে তার নির্দেশে প্রতারক আফজলের মোবাইল ট্র্যাকিং করে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তাকে ফোন করা হলে সে ভুয়া ঠিকানা প্রকাশ করে। মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের লোকজনের নেতৃত্বে কৌশলে প্রতারক আফজল ও তার সহযোগীদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির করা হয়। পরে ভুল স্বীকার করে মুচলেকা প্রদান করায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, প্রতারক আফজল আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সদর থানা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হন। আফজলের প্রতারণার শিকার বিভিন্ন গ্রামের অর্ধশতাধিক লোক অবস্থান নেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে।
এরই মধ্যে হবিগঞ্জ সদর থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শায়েস্তানগর এলাকার ঠিকাদার মোহাম্মদ টিপু। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শহরে বড় ধরনের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক আফজল।
পরে তাকে গ্রেফতারের জন্য সদর মডেল থানার ওসি মো. মাসুক আলী ও ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যায় আফজল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে আফজলের আটকের পর মুখ খুলতে শুরু করেন প্রতারণার শিকার লোকজন। অভিযোগে বেরিয়ে আসে তার প্রতারণার বিভিন্ন কাহিনী। দেশের বড় বড় মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিত আফজল। চাকরি, বদলি, ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়া, জামিনসহ বিভিন্ন তদবিরের নামে লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আফজল।
সরকারের ওপর মহলের সাথে দহরম-মহরম রয়েছে এমন প্রচারণা চালাত আফজল। তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস করেনি কেউ। অবশেষে আটকের পর কয়েক ডজন প্রতারণার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে।
প্রতারক আফজল হোসেন সদর উপজেলার আউশপাড়া গ্রামের আব্দুল হেকিমের ছেলে। সে আনসার ভিডিপিতে চাকরি করত। সেখান থেকে চাকরি হারিয়ে প্রতারণায় নামে বলে জানা গেছে।
সদর থানার ওসি মো. মাসুক আলী জানান, আফজল রাজনৈতিক নেতা ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৌশলে ছবি তুলে তা ফেসবুকে প্রচারণা দিত। মানুষকে বোঝাতো তাদের সঙ্গে তার খুব সখ্য রয়েছে। এরপর নানা তদবিরের কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একজন ব্যবসায়ী মামলাও দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের মল্লিকসরাই গ্রামের মো. মাহবুবুর রহমানকে ইংল্যান্ড পাঠানোর কথা বলে ১২ লাখ টাকায় চুক্তি করে আফজল। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি চেকের মাধ্যমে অগ্রিম ৪ লাখ টাকা নিয়েছে সে।
