ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৃহস্পতিবার একসঙ্গে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম (৩৫) ও তার পুত্র মুসায়েব সামান আম্মার (১০)।

পিতা-পুত্রের বিদ্যাপীঠ ধোপাজাঙ্গালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানসহ হাজারও জনতা অংশ নেন। নিজ বাড়ির পাশে পারিবারিক গোরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।

বুধবার সকাল ৬টায় দুই সন্তান চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মুসায়েব সামান আম্মার ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. জিল জাওয়ান জিবাবীকে নিয়ে উচিতপুরের উদ্দেশে রওনা হন শফিকুল ইসলাম। ময়মনসিংহ থেকে আসা ওস্তাদ মাওলানা মো. মাহফুজুর রহমানের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এ আনন্দভ্রমণে অংশ নেন তারা।

শফিকুল ইসলাম ধোপাজাঙ্গালিয়ার দু’মাদ্রাসার মোহতামিম। আবুল কালাম আজাদের ২ ছেলে ও ২ কন্যার মধ্যে শফিকুল ইসলাম ছিল বড়।
 
নেত্রকোনার মদন উপজেলায় পর্যটন কেন্দ্র মিনি কক্সবাজার নামে খ্যাত উচিতপুরের হাওরে ঘুরতে গিয়ে নৌকাডুবিতে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। লাশের সারিতে শায়িত বাবা শফিকুল ইসলাম ও পুত্র মুসায়েব সামান আম্মার। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উচিতপুরের সামনে হাওর গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ওই রাত ১০টার দিকে পিকআপে পিতা-পুত্রের লাশ বাড়িতে আসে। পিতা-পুত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের মাতম শুরু হয়। বারবার মূর্ছা যান তার বাবা আবুল কালাম আজাদ।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলে আমার জানাজা দিবে, সেই আশায় হাফেজ মাওলানা পড়িয়েছি। এ আশা কেড়ে নিল উচিতপুরের উত্তাল ঢেউ।

অপরদিকে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য রাতেই ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর। তিনি এ সময় পিতা-পুত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের হাতে ৪০ হাজার টাকার অনুদান তুলে দেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, এ মৃত্যুর সংবাদে পুরো উপজেলায় শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, এলাকাবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। দু’মাদ্রাসার শত শত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।