পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল পৌনে ২ কোটি টাকা (ভিডিওসহ)
এটিএম নিজাম, কিশোরগঞ্জ ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২০, ০২:১৩ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নাম পাগলা মসজিদ। কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে পাঁচটি লোহার বানানো দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সটি খোলা হয়। কিন্তু এবার করোনাকালের জন্য ছয় মাস পর আজ শনিবার দানবাক্স খুলে সবাই অবাক!
শনিবার সকালে দানবাক্স খুলে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে টাকা গণনা। আর বরাবরের মতোই এসব দানবাক্স খুললে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার মেলে। করোনাকালেও ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের এসব দানবাক্সে পৌনে ২ কোটি টাকা দান করেছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।
প্রতি তিন মাস অন্তর এসব দানবাক্স খোলার রেওয়াজ থাকলেও এবার করোনাকালের জন্য ছয় মাস ৭ দিন পর আজ শনিবার এসব দানবাক্স খোলা হয়। এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এসব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৮ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার।
ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, এসব অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
মসজিদের খতিব,এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন সূত্রে জানা যায়, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন।
সূত্রমতে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু এরপর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।
তারা নগদ টাকা-পয়সা,স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।
আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ মসজিদটির ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। আর দানের বিপুল অর্থ মসজিদ ও মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
আর টাকা গোনার কাজে অতিরিক্ত জেলা মাজিস্ট্রেট (এডিএম), নেজারত ডেপুটি কালেক্টর, নির্বাহী মাজিস্ট্রেট, রূপালী ব্যংকের এজিএম ও অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকেন।
