Logo
Logo
×

সারাদেশ

আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট, বরগুনা

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২০, ০৪:৪২ পিএম

আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র অনাস্থা দেয়ায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উভয়পক্ষের মধ্য উত্তেজনা বিরাজ করেছে।

রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয় প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করেন আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফোরকান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরগুনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান, বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটন ও তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবিরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

একই স্থানে দুপুর আড়াইটায় সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের অপর অংশ মেয়র গ্রুপের আমতলীর সাতজন ইউপি চেয়ারম্যান।

আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আমতলীর মেয়র মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে গত ২১ আগস্ট সাত চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র বরগুনা জেলা প্রশাসকের দফতরে যে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটির ও বিন্দুমাত্র সত্যতা নাই। যদি সত্য হতো তাহলে এই কথিত অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগে ওই সব জনপ্রতিনিধিরা মৌখিকভাবে কিংবা আপনাদের গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে এ সবের স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে অন্তত কিছু অভিযোগ তুলে ধরতে পারতেন। এমনকি তারা উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভা বর্জন করতে পারতেন।

গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ ছিল না বলে তারা এটা করার সুযোগ পায়নি। এখন হঠাৎ করে মনগড়া কিছু অভিযোগ তুলে তারা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। এটা সম্পূর্ন উদ্দেশ্য মূলক। উপজেলা বিধিতে কোনো অনাস্থা নেই। আমি যদি কোনো দুর্নীতি করি তাহলে তথ্য উপাত্য দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করতে পারতেন।

তিনি বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। তারাও হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আমার বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে অভিযোগ দিতে পারতেন। আমাকে সমাজে ছোট করার জন্যই আমাকে কথিত অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি জনগণের ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমি দলের দুর্দিনের একজন নিবেদিত কর্মী। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনো অসততার কালিমা নেই। এজন্য ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেয়া বরগুনা-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।

অনাস্থা প্রদানকারীরা বিএনপি, জামাতপন্থী ও অনুপ্রবেশকারী দাবী করে গোলাম সারোয়ার ফোরকান আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই এই অনাস্থা প্রদানকারী চক্রের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে অবহিত আছেন। এদের মধ্যে ২০০২ সালের ২৪ মে আমতলী উপজেলা বিএনপি অনুমোদিত কমিটিতে বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমান ৪৪ নম্বর সদস্য, তার আপন ভাই মজিবর রহমান কোষাধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাদল খান ৪৫ নম্বর সদস্য, চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মেয়র মতিয়ার রহমান ও মজিবর রহমানের বোন ফিরোজা বেগম বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, ভাগিনা আবুল কালাম আজাদ স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ছিলেন।

তিনি বলেন, তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী। দলে অনুপ্রবেশ করেই অন্য অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে মিলে পুরনো ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করে রাখে। এমনকি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী পদে নির্বাচিত করেন মতিয়ার রহমান এর স্ত্রী নুসরাত জাহান লিমুকে।

অপর দিকে আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার ফোরকানের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই দুপুর আড়াইটায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে অনাস্থা প্রস্তাবকারীরা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আমতলী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিবর রহমানসহ সাত ইউপি চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, গোলাম সারোয়ার ফোরকান আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আইন লঙ্ঘন করে তার ইচ্ছামতো খামখেয়ালীভাবে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা পরিষদ পরিচালনা করছেন।

এছাড়া সবার পক্ষে তিনি ১০ দফা দাবি জানিয়ে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান দুর্নীতি ও লুটপাট করেছেন। তার পরিষদে কোনো সদস্য নেই। আমরা সবাই বয়কট করেছি। তার পরিবারের কোনো সদস্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত নয়। সবাই বিএনপি করেন। এ ছাড়া গোলাম সরোয়ার ফোরকান দলীয় প্রার্থী জিএম দেলোয়ারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচন না করলে দলীয় প্রার্থী জিএম দেলোয়ার হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান হতেন। তিনি আবার আমাদের অনুপ্রবেশকারী বলেন।

সব ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, গোলাম সরোয়ার ফোরকান যতদিন আছেন ততোদিনে আমরা আর আমতলী উপজেলা পরিষদে যাব না। তার মতো দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানকে উপজেলা পরিষদে দেখতে চাই না।

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকারম বলেন, একই দলের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি।

বরগুনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম