Logo
Logo
×

সারাদেশ

প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকায় ভাগ বসালেন চেয়ারম্যান!

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:২৫ পিএম

প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকায় ভাগ বসালেন চেয়ারম্যান!

রাজশাহীর একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকায় ভাগ বসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক বছরের জন্য প্রতিবন্ধীরা ৯ হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।

মাথাপিছু বাকি চার হাজার টাকা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণাদি যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।

অভিযুক্ত এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম রুহুল আমিন নয়ন। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তবে চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। নয়ন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বলেও জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মাটিকাটা ইউপির উপকারভোগী প্রতিবন্ধীদের মাঝে সরকার প্রদত্ত প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ইউনিয়নে উপকারভোগী প্রতিবন্ধী প্রায় ৩০০ জন। এর মধ্যে এক নম্বর ওয়ার্ডে উপকারভোগী প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৫৪ জন। প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা দেয়া হয়। আর গত জুলাইয়ে প্রতিবন্ধীদের এক বছরের টাকা এক সঙ্গে দেয়া হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবন্ধীরা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে গিয়ে নিজেরাই ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা। কিন্তু মাটিকাটা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়ন নিজেই তার এক নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের স্বাক্ষরসহ প্রতিবন্ধী ভাতার বই সংগ্রহ করে আনেন।

এরপর ব্যাংক থেকে প্রত্যেক প্রতিবন্ধীর জন্য ৯ হাজার টাকা করে তোলা হলেও তাদের দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। বাকি চার হাজার টাকা চেয়ারম্যান রেখে দিয়েছেন নিজের পকেটেই। এভাবে এক নম্বর ওয়ার্ডের ৫৪ জন প্রতিবন্ধীর দুই লাখ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকরা কিন্তু ভাতা বাতিল করে দেয়ার ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

১নং ওয়ার্ডের অন্তত ১০ জন প্রতিবন্ধী ও তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা পাঁচ হাজার করে টাকা পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের মতো অন্যরাও চার হাজার করে টাকা কম পেয়েছেন। কাউকে কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার নিজের বাড়িতে ডেকে পাঁচ হাজার করে টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকরা বাকি চার হাজার টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘এটা খরচ’।

১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুকুল শাহ আগে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও গ্রামে গ্রামে তেল বিক্রি করতেন। এখন পারেন না। অনেক ঘুরে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করতে পেরেছেন। তবে পুরো টাকা পাননি। অন্য সবার মতো তারও চার হাজার টাকা কেটে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

মুকুল শাহ বলেন, আমাদের পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছেন চেয়ারম্যান। আমাদের নামে এসেছিল নয় হাজার টাকা। কার্ডেই এটা লেখা আছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন- কাগজপাতি কাউকে দেখাবেন না। চুপচাপ থাকেন।

ওই ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী মীর সাব্বির সিজারের মা বলেন, তার ছেলে প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পেয়েছে। কিন্তু তিনি জানতেন ৯ হাজার টাকা পাওয়া যায়। বাকি চার হাজার টাকা ১নং ওয়ার্ডের সদস্য রুহুল আমিন নয়ন নিয়েছেন। রুহুল আমিন নিজেই টাকা তুলে এনে দিয়েছেন।

প্রতিবন্ধী শিশু মো. আবদুল্লাহর মা রূপালী বেগম বলেন, তার দুই ছেলে প্রতিবন্ধী। তারা এবারই প্রথম ভাতা পেয়েছে। দুই ছেলেকে দেয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তবে তার ভাতার বইয়ে প্রতি সন্তানকে ৯ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে লেখা আছে। বাকি আট হাজার টাকা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন রূপালী বেগম।

আরেক প্রতিবন্ধী শিশু ওয়াসিম জানায়, চেয়ারম্যান তাকে ডেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি চার হাজার তিনি নিজের কাছে রেখেছেন। চেয়ারম্যান নয়নের বাড়ি থেকে তার মা টাকা এনেছেন। আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন নয়ন।
অথচ ব্যাংক থেকে চেয়ারম্যানকে টাকা দেয়ার কথা নয়।

প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুহুল আমিন নয়ন বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিবন্ধী কার্ড সংগ্রহ করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ সঠিক না। প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে চার হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন। একটি মহল আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, এ ঘটনার তদন্ত করা হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গোদাগাড়ীর ইউএনও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

রাজশাহী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম