Logo
Logo
×

সারাদেশ

পুনর্বাসনের অপেক্ষায় কুড়িগ্রামের ৮ হাজার বাস্তুহারা পরিবার

Icon

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২০, ০১:৩৭ পিএম

পুনর্বাসনের অপেক্ষায় কুড়িগ্রামের ৮ হাজার বাস্তুহারা পরিবার

কুড়িগ্রামে এ বছর নদীভাঙনের শিকার ৮ হাজার পরিবারের মাথাগোঁজার ঠাঁই মেলেনি এখনও। বসতভিটা না থাকায় মালামাল নিয়ে এসব পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ, রাস্তা ও অন্যের জমিতে। 

ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় অনেকেই টিনের চালা, পলিথিন ও তাঁবু টাঙিয়ে বাস করছেন।

‘ঘরদয়োরতো সউগ নদীত পড়চে। ভিটাও নদীত। রাস্তার উপরা পড়ি আছি। টাকা-পইসা নাই। কাম-কাজও নাই। সাহায্যও নাই। এলা বাড়ি করি কেমন করি’- বন্যার সময় ধরলার ভাঙনে শিকার মহিমা বেগম জানালেন তার অসহায়ত্বের কথা। 

মহিমা বেগমের মতো সারডোবের শতাধিক পরিবার পড়েছে দুর্ভোগে। দফায় দফায় নদীভাঙনে তাদের ভিটের শেষ চিহ্নটুকু মুছে গেছে। কোথাও মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। তাই পড়ে আছেন রাস্তার ধারে-বাঁধে-খোলা জায়গায়। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারানো ৬টি উপজেলার ৬ হাজার পরিবারের একটি তালিকা প্রথম দফায় পাঠানো হয়েছে। পরে আরও একটি তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। 

ধারণা করা হচ্ছে- নদীভাঙনের শিকার আরো পরিবারের তালিকা খুব দ্রুত পাওয়া যাবে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও সোনাভরির ভাঙনে বিলীন অনেকের ঘরবাড়ি ও বসতভিটা। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে বাঁধ ও রাস্তার ঝুপরি ঘরে। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেনি ভাঙনকবলিত হতদরিদ্র পরিবারগুলো। বর্তমানে তাদের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের জহির উদ্দিন জানান, নদীভাঙনের তীব্রতার মুখে বাড়ির অনেক মালামাল ভেসে গেছে। তিনটি ঘরের চাল ভেঙে নৌকায় করে এনেছেন ফাঁকা জায়গায়। সেখানে মাচা করে রেখেছেন টিনগুলো নৌকা ভাড়া ও বাড়ি স্থানান্তরের খরচ মেটাতে শতকরা ২০ টাকা সুদে দাদন নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। 

ফসল নষ্ট হওয়ায় কাজ নেই বন্যাকবলিত চরাঞ্চলে। তাই খাদ্য ও অর্থ সংকটে নাকাল ভিটেহারা পরিবারগুলো। তাই জরুরি ভিত্তিতে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসনের দাবি দুর্ভোগে পড়া হাজারও পরিবারের। 

সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন আবেদুল, রাজ্জাক, নবীর ও নজিরসহ ৬০টি পরিবার। তারা জানান, সারডোব এখন বিধ্বস্ত জনপদ। আবাদের চিহ্নমাত্র নেই। কাজ নেই। ঘরে ঘরে অভাব। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া কোনো উপায় নেই। 

সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের জগমোহনের চর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত আলী হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবা, দুইডা ঘর ভাসি গেইচে। একটা কোনোমতে আটকেয়া ছাপড়া তুলি আছি। খাওয়া দাওয়ার খুব কষ্ট হইচে। ভিটাতো নাই, এলা যামো কোটে।’ 

এই চরটিও এবার বিলীন হয়েছে ধরলার তীব্র ভাঙনে। এই গ্রামের দুলালী বেগম, জসিম উদ্দিন, করিমুদ্দিন, জুয়ান মিয়া ভিটে হারিয়ে বাঁধ ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার জগমোহনের চর, পাঁছগাছি, যাত্রাপুর, নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, রায়গঞ্জ, ভুরুঙ্গামারীর চর ভুরুঙ্গামারী, উলিপুরের বজরা, থেতরাই, চিলমারীর নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

বন্যার সময় তারা সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পেলেও বর্তমানে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। 

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর জন্য নগদ অর্থ ও ঢেউটিন চাওয়া হয়েছে। এখনও পাওয়া যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদানের সহায়তা ও গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার চলমান কর্মসূচিতে বরাদ্দ পাওয়ার কথা রয়েছে। এসব সহায়তা পেলে সরকারি নিয়মে তা বিতরণ করা হবে।

কুড়িগ্রাম বন্যা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম