Logo
Logo
×

সারাদেশ

পাবিপ্রবির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২১, ০৪:৪৪ পিএম

পাবিপ্রবির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে (শিক্ষা জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে) চৌর্যবৃত্তির (প্ল্যাজিয়ারিজম) অভিযোগ উঠেছে।

অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি শিক্ষা জার্নালে তাদের প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে মেধাস্বত্ব চুরি করেছেন পাবিপ্রবির ওই দুই শিক্ষক।

অভিযুক্ত শিক্ষক দুইজন হলেন- পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আওয়াল কবির জয় এবং অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইয়াহিয়া বেপারী।

এদিকে এ ঘটনার পর পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া ইউজিসিও পৃথকভাবে বিষয়টির তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

এ নিয়ে ইউজিসি ও পা০বিপ্রবিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাবিপ্রবির জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত ১০ মে অস্ট্রেলিয়ার ওই দুইজন শিক্ষকের পাঠানো অভিযোগ পাওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পাবিপ্রবি সূত্রে জানা গেছে, দুই শিক্ষক আওয়াল কবির ও ইয়াহিয়া বেপারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক একটি জার্নালে সম্প্রতি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। এই নিবন্ধ প্রকাশের পর অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাকিব চৌধুরী এবং ড. মাহবুব সরকার অভিযোগ করেন, শিক্ষা বিষয়ে তাদের লেখা একটি নিবন্ধ থেকে বেশির ভাগ অংশই চৌর্যবৃত্তি বা তাদের মেধাস্বত্ব চুরি করা হয়েছে। এরপর গত ১০ মে তারা বিষয়টি নিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পাওয়ার পর ২৯ মে পাবিপ্রবির একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের প্রকাশিত নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বলা হয়, এ ধরনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কাজেই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ও পরিবেশ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির শিক্ষক এম শামীম কায়সার।

পাবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী যুগান্তরকে বলেন, কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ কমিটি অভিযোগের বিষয়ে যাচাই করবে এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপাচার্য আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ার দুইজন শিক্ষক একই সঙ্গে ইউজিসিতে অভিযোগ করায় ইউজিসিও বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন এবং প্ল্যাজিয়ারিজম বন্ধে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছেন।

এদিকে পাবিপ্রবি গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন এবং যথাসময়েই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আশা করছেন তারা।

তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধ শাস্তিযোগ্য। তবে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি হয়ে থাকে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এটাও বলেন, এ ধরনের কাজে অপরাধের মাত্রা বেশি (চুরির মাত্রা) হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করার নজির রয়েছে।

অধ্যাপক শাহাদাত এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে অ্যান্টি-প্ল্যাজিয়ারিজম সফটওয়্যার ‘টার্নিটিন’ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইতোমধ্যে ইউজিসির এক সভায় গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তি মোকাবিলায় টার্নিটিন সফটওয়্যার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে ৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই সফটওয়্যারের সেবা সরবরাহ করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এ সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণার স্বত্ব সংরক্ষণ ও মৌলিকত্ব নিশ্চিত করা সহজ হবে।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে একজন মো. ইয়াহিয়া বেপারী সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আওয়াল কবির নিবন্ধের মূল লেখক। তিনি ওই নিবন্ধের সহলেখক এবং তিনি শুধু নিবন্ধের গ্রামাটিক্যাল ও মেথডোলজি বিষয়টি দেখেছেন। তারপরও অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের প্রকাশিত নিবন্ধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া তিনি মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকদের কাছে দুঃখও প্রকাশ করেছেন।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম