নববধূকে হত্যার পর আগুন ধরিয়ে দিয়ে নামাজে যান প্রবাসী
কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২২, ০১:৩৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লার বরুড়ায় পারিবারিক কলহ ও যৌতুক না পেয়ে নববধূ ইয়াসমিন আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর শরীরে কেরোসিন ঢেলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন প্রবাসী স্বামী রেজাউল করিম। এরপর তিনি ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যান। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঘরে ‘সিলিন্ডার বিস্ফোরণের’ নাটক সাজিয়ে ছিলেন রেজাউল।
গত ১১ মার্চ ভোরে জেলার বরুড়া থানার ডেউয়াতলী এলাকায় এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনার রহস্য বের করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার গভীর রাতে নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে ঘাতক স্বামী রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করে র্যাব।
মঙ্গলবার কুমিল্লা শাকতলাস্থ র্যাব কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের এসব তথ্য জানান র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১০ জানুয়ারি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ঢেউয়াতলী গ্রামের আলতাফ মিয়ার প্রবাস ফেরত ছেলে রেজাউল করিম (৩৫) চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার দক্ষিণ ডিংগাভাঙ্গা গ্রামের মৃত মো. আক্তার মুন্সীর মেয়ে ইয়াসমিন আক্তারকে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করেন। এ বিয়ে ছিল ইয়াছমিনের দ্বিতীয় বিয়ে।
বিয়ের পর যৌতুক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বিয়ের পরপরই তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করেও সংসারে থাকতে চেয়েছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। কিন্তু কলহের জের ধরে ১১ মার্চ রাতে রেজাউল কয়েক দফায় তার স্ত্রীকে মারধর করেন। ঝগড়ার একপর্যায়ে তাকে গভীর রাতে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ভোরবেলায় স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য স্থানীয় মসজিদে চলে যায় ঘাতক রেজাউল। বাড়ির লোকজন ঘরে আগুন দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। এদিকে লোকজনের চিৎকার শুনে মসজিদ থেকে ছুটে এসে রেজাউলও আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। কিন্তু ততক্ষণে ঘরসহ খাটে থাকা তার স্ত্রী ইয়াসমিন আগুনে পুড়ে মারা যায়।
এ ঘটনায় পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। কিন্তু পরে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করার পর রেজাউল ও পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে ছায়া তদন্তে মাঠে নামে র্যাব। একপর্যায়ে সোমবার রাতে রেজাউলকে কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে আটক করে র্যাব।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, ঘাতক রেজাউল তার স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। সে স্ত্রীর জানাজা ও দাফন শেষে আত্মগোপনে চলে যায় এবং বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। গ্রেফতার রেজাউলকে মঙ্গলবার দুপুরে বরুড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বরুড়া থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, নিহত ওই গৃহবধূর মা বেবী আক্তার এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রেজাউল করিমকে একমাত্র আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
