কৃষককে ‘আটকে’ কাঁচা ধান কেটে জমি দখলের অভিযোগ
গাছা (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২:০৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গাজীপুর মহানগরের গাছায় কৃষককে আটকে রেখে কাঁচা ধান কেটে জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকালে স্থানীয় মৈরান এলাকায়।
জমি দখলে বাধা না দেয়ার শর্তে রাতে সেহেরির আগে থানা থেকে মুক্তি দেয়া হয় ওই কৃষককে। পুলিশের এ ভূমিকায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী জমির মালিক শামীম অহমেদ জানান, বিকাল ৪টায় গাছা থানা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী আমিন উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে যুবলীগের ২৫-৩০ জনের বাহিনী জমি দখলের জন্য কাঁচা ধান কেটে বাউন্ডারি নির্মাণের চেষ্টা করেন। এ সময় জবরদখলকারীদের সঙ্গে গাছা থানার এসআই সজীব দেবনাথও সিভিল পোশাকে উপস্থিত ছিলেন।
জবর দখলে বাধা দেয়ায় তৎক্ষণাৎ গাছা থানা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং উভয়পক্ষকে জমির কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলে। এ সময় এসআই সজীব দেবনাথ মোটরসাইকেলে উঠিয়ে কৃষক শামীমকে থানায় নেয়ার পথে স্থানীয় বাগান বিলাস রিসোর্টের সামনে সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে। এ সময় এসআই সজীব ও সন্ত্রাসীরা তাকে মারপিট করে। পরে তাকে থানা হাজতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। অবশেষে তিনি জমি দখলে আর বাধা দিবেন না এমন শর্তে মুচলেকা নিয়ে সেহরির আগে থানা হাজত থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় মৈরান মৌজায় প্রায় পৌনে এক বিঘা জমি পৈত্রিক সূত্রে তারা যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছেন দাবি করে কৃষক শামীম বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় যেভাবে জোর-জুলুম করে ক্ষেতের কাঁচা ধান কেটে জমিটি দখলের চেষ্টা করা হয়েছে তাতে নিজেদেরকে রোহিঙ্গার মতো মনে হয়েছে। এ দেশে যেন আমাদের থাকার কোনো অধিকারই নেই।
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সাংবাদিক আনিসুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, জমির মালিক তার চাচাতো ভাই। জবরদখলকারীদের কাঁচা ধান কাটার দৃশ্য দেখে তিনি মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করছিলেন। এতে গাছা থানার এসআই সজীব দেবনাথ তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও ওই পুলিশ অফিসার তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং থানায় নিয়ে ‘শায়েস্তা’ করার হুমকি দেন।
এ ঘটনায় তিনি জিএমপি দক্ষিণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে ঘটনার ভিডিওচিত্র মুছে দিয়ে রাতেই মোবাইল ফোনটি তাকে ফেরত দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা আমিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে, জমিতে শামীমদের মালিকানা নেই। শামীমদের কাছ থেকে যিনি জমিটি ক্রয় করেছেন তিনিই জমিটি চাষাবাদের জন্য শামীমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু শামীম জমির দখল না ছাড়ায় আমি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতিপ্রার্থী রশিদকে জমিটি মেপে প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলাম। যেহেতু আমার ঠিকাদারি লাইসেন্স আছে তাই ওই জমির বাউন্ডারি নির্মাণের কাজ আমাকে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে গাছা থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য শামীমকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। পরে প্রতিমন্ত্রীর চাচা মতিউর রহমান মতির মধ্যস্থতায় শনিবার থানায় বসে ফয়সালার শর্তে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন পুলিশ অফিসারের হেফাজতে নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি ভুল বুঝাবুঝি। পরে রাতে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়েছে।
