Logo
Logo
×

সারাদেশ

গ্রাহকের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সমবায় সমিতির সম্পাদক

Icon

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০২:৪৭ পিএম

গ্রাহকের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সমবায় সমিতির সম্পাদক

ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাট সদর উপজেলার সিঅ্যান্ডবি বাজারের সাধারণ গ্রাহকদের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান নামের সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার।

গেল এক সপ্তাহ ধরে বিপ্লবের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। স্থানীয়দের ধারণা স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ভারত চলে গেছেন বিপ্লব। এই অবস্থায় সিঅ্যান্ডবি বাজারে থাকা মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির অফিস, সমিতির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহক ও জন প্রতিনিধিরা। 

এদিকে সাধারণ সম্পাদককে খুঁজে না পেয়ে সমিতির সভাপতি উন্নয়নকর্মী মানিক দাসকে টাকার জন্য চাপ ও মারধর করেছেন গ্রাহকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালে সিঅ্যান্ডবি বাজার এলাকার মানিক দাস ও বিপ্লব সরকার স্থানীয় কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠান করেন। সিঅ্যান্ডবি বাজারের পরিতোষ দাসের ভবনে অফিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তারা। স্থানীয় সহজ সরল মানুষদের গ্রাহক বানিয়ে দৈনিক, মাসিক ও এককালীন বিনিয়োগ নেওয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। মানিক দাস একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরিরত থাকায় সমিতির অর্থসহ সব ধরণের দেখভাল করতেন বিপ্লব সরকার। 

এভাবে বিপ্লব সরকার স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ নেয়। এর মধ্যে ৭০ লাখ টাকা গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া আছে। এই অবস্থায় গেল ১৯ এপ্রিল থেকে সমিতির প্রধান নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার পলাতক রয়েছে। 

এদিকে সভাপতি মানিক দাসের কাছ থেকে জোরপূর্বক কয়েকটি চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। 

এনজিওটির ভাড়া করা ভবনের মালিক পরিতোষ দাস বলেন, মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে আমার নিজের ১০ লাখ টাকা এবং আমার দুই বন্ধুর ৮ লাখ টাকা রয়েছে। আমার ৯ মাসের ভাড়াও বাকি তাদের কাছে। এই অবস্থায় যে সমিতি চালাত-সমিতির টাকা পয়সা পরিচালনা করতেন সেই বিপ্লব সরকার পালিয়ে গেছে। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বৃদ্ধ বাবা-মাও ছেলের কোনো খোঁজ দিতে পারে না। বউ আর একমাত্র মেয়েরও কোনো খোঁজ নেই। আমাদের ধারণা গ্রাহকদের টাকা পয়সা নিয়ে সে ভারত চলে গেছে।
কাজী তারেক নামের এক গ্রাহক বলেন, লাভের আশায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিল আমার সমিতিতে। অনেক কষ্ট করে টাকা রেখেছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। 

নিলয় দাস নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, লোভে পরে প্রতি মাসে এক লাখ টাকায় ১৪শ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে সমিতিতে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কী হবে জানি না। যেকোনো মূল্যে আমরা টাকা ফেরত পেতে চাই।

সমিতির ম্যানেজোর কাম হিসাবরক্ষক পলাতক বিপ্লবের চাচাতো ভাই অনিক সরকার বলেন, গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে আমাদের কাছে। ঋণী গ্রহাকদের কাছে আমাদের ৭০ লাখ টাকার মত রয়েছে। সমিতি ভালই চলছিল, এই অবস্থায় কেন সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে গেল জানি না। আমরা তো খুব বিপদে পড়ে গেলাম। 

সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার যেভাবে বলতেন সেভাবেই আমাদের সমিতি চলত। সভাপতি তেমন আসতেন না। সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে যাওয়ার পরে এলাকার লোকজন আমাদের প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে।

সমিতির ইলেক্টনিক্স বিভাগের পাইকারি সেকশনের দায়িত্বে থাকা কার্তিক সরকার বলেন, ওয়াল্টনসহ তিন-চারটি কোম্পানির পণ্য আমরা পাইকারি বিক্রি করতাম। গত ১৯ এপ্রিল থেকে বিপ্লব সরকার পলাতক রয়েছেন। যারা সমিতির কাছে টাকা পাবে তারা আমাদের শো-রুমে তালা দিয়ে গেছেন। এখন আমরা খুচরো বিক্রেতাদের কাছে আমরা যে ৪৬ লাখ টাকা পাব তা কীভাবে উঠাব? আবার কোম্পানির লোকরা আমাদেরে কাছে প্রায় ৩২ লাখ  টাকা পাবে এই টাকা কোথা থেকে দিব। 

বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করে না পেয়ে সিঅ্যান্ডবি বাজারের অদূরে বিপ্লবের বাড়িতে যেয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তালাবদ্ধ ঘরে বিপ্লবের বাবা-মাও নেই। সপ্তাহখানেক আগে কোথায় যেন চলে গেছে বলে জানান বিপ্লবের প্রতিবেশীরা।

সমিতির সভাপতি মানিক দাস বলেন, একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করতাম। যার কারণে সমিতির কোনো বিষয় দেখভাল করতাম না। সকল টাকা পয়সা ও ম্যানেজমেন্ট দেখাশুনা করত বিপ্লব সরকার। গ্রাহকদের কোনো টাকা নেইনি, কোনো গ্রাহক আমার কাছে টাকাও দেয়নি। বিপ্লব সরকার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত করে দেখলে বুঝতে পারবেন এই ঘটনায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিপ্লবই সব টাকা নিয়ে পালিয়েছে। বিপ্লবকে ফিরিয়ে এনে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সমবায় সমিতির নামে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
 

গ্রাহক আড়াই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সমবায় সমিতি সম্পাদক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম