Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘জিনের’ খপ্পরে শাশুড়ি-পুত্রবধূ!

Icon

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৩:০৯ পিএম

‘জিনের’ খপ্পরে শাশুড়ি-পুত্রবধূ!

জিনেরা মিষ্টি খায়। তাও প্রায় দুই লাখ টাকার। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এমনটাই ঘটেছে ভোলার লালমোহনে। মূলত জিনের মিষ্টি খাওয়ার নাম করে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। 

এমনই একটি জিন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝ গ্রামের কমড় আলী মাঝি বাড়ির শাশুড়ি ও পুত্রবধূ। প্রতারণার শিকার হওয়া শাশুড়ি বিবি হনুফা ও পুত্রবধূ মুক্তা বেগম। 

ভুক্তভোগী পুত্রবধূ মুক্তা বেগম জানান, ঘটনার শুরু ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ১টায়। ওই সময় হাঠাৎই একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে মুক্তার নাম্বারে। ওই নাম্বারের অপরপ্রান্ত থেকে লম্বা সালাম দিয়ে বলে আমরা বাতাসের তৈরি, জিন জাতি। ভাগ্যবতী নারী তুই, যার জন্যই তোকে ফোন করা হয়েছে। তোদের আর কিছু করতে হবে না, সারাজীবন বসে বসে খেতে পারবি। অপরপ্রান্তের এমন কথা শুনে মোবাইল নিয়ে মুক্তা ছুটে যান তার শাশুড়ি বিবি হনুফার কাছে। এরপর ওই কথিত জিন কথা শুরু করে তার সঙ্গে। তাকে ইসলামি বিভিন্ন কথা শুনিয়ে হনুফার বিশ্বাস অর্জন করে।

মুক্তা বেগম আরও জানান, এরপর প্রতি রাতেই ফোন করে কথা বলতে থাকে ওই কথিত জিন। একপর্যায়ে তাদের হাঁড়িভর্তি স্বর্ণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। তারা কথিত ওই জিনের ফাঁদে পড়ে। ওই কথিত জিন এক সময় বলে এসব স্বর্ণ পেতে হলে তাদের সঙ্গে ১৭ হাজার ৯৯৯ জন জিনকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে। এই মিষ্টি খাওয়াতে ওই সব জিনদের টাকা দিতে হবে। লোভে পড়ে ওই কথিত জিনদের জন্য টাকা পাঠানো শুরু করে মুক্তা বেগম ও তার শাশুড়ি। 

মুক্তার শাশুড়ি বিবি হনুফা বলেন, আমাদের সঙ্গে ০১৬৩২৮২২৯২৮ ও ০১৩১২৭১১৫৮২ এই দুইটি নাম্বার দিয়ে এমন করে কথা বলেছে, যা বিশ্বাস না করার কোনো উপায় নেই। তারা স্বর্ণ রাখার জন্য আমাদের দিয়ে পাতিল ও নতুন হলুদ কাপড় কিনিয়েছে। তারা বলেছে ওই পাতিলটি হলুদ কাপড় দিয়ে ডেকে রাখতে, যেকোনো সময় স্বর্ণে ভরে যাবে পাতিলটি। এছাড়াও ওই কথিত জিন বলেছে; এসব কথা যদি আমরা কাউকে বলি তাহলে আমাদের স্বামী ও বাচ্চা মারা যাবে এবং অনেক বড় ক্ষতি হবে। তাই আমরা একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাদের কথামতো ঋণ করে টাকা দেওয়া শুরু করি। 

তিনি আরও বলেন, কথিত জিন আমাদের থেকে মিষ্টি খাওয়া ও বিভিন্ন খরচসহ মোট দুই লাখ টাকা দাবি করে। কথামতো আমরা কাউকে না জানিয়ে দুইটি বিকাশ নাম্বারে মোট ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই। সবশেষ গত ২ অক্টোবর আমার মেজো ছেলেকে দিয়ে টাকা পাঠাতে গেলে সে বিষয়টি সন্দেহ করে। এরপর আমরা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এতে করে আমরা নি:স্ব হয়ে পড়েছি।

বিবি হনুফার মেজো ছেলে মো. নাদিম জানান, আমাদের কাউকে না জানিয়েই আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ওই কথিত জিনের ফাঁদে পড়ে টাকা দিয়েছে। আমাকে দিয়েও ওই জিনের জন্য টাকা পাঠাতে চেয়েছে তারা। তবে বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। এরপর মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝতি পারি আসলে জিন নয়, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। এ ঘটনায় আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় চলছে ব্যাপক তোলপাড়। এসব নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে লালমোহন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. এনায়েত হোসেন বলেন, এমন কোনো ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জিনের খপ্পর শাশুড়ি পুত্রবধূ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম