Logo
Logo
×

সারাদেশ

না.গঞ্জে এক মাসে কুকুরের কামড়ে ২ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে

Icon

রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৫:০৪ পিএম

না.গঞ্জে এক মাসে কুকুরের কামড়ে ২ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে

নারায়ণগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের। শুধুমাত্র গত অক্টোবর মাসেই সরকারি হিসাবে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৩৭ জন, যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সিংহভাগ। কিন্তু এই হিসাব শুধুমাত্র সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।

এরপর সরকারি চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন না পাওয়া রোগীর কোনো সংখ্যা বা তালিকা হাসপাতালে না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গত ১ মাসেই ছিল ২ হাজারের উপরে।

অপরদিকে হাজার হাজার বেওয়ারিশ কুকুরকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনারও কোনো ব্যবস্থা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কয়েক বছর আগে একটি পাইলট প্রজেক্টের আওতায় সিটি করপোরেশন এলাকায় কয়েক হাজার কুকুরকে ‘ জলাতঙ্ক রোধক’ ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও সেটিও বন্ধ আছে। ফলে মানুষ ও কুকুর উভয় শ্রেণিই আছে ভ্যাকসিন সংকটে।

জানা গেছে, বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে কুকুর নিধন বন্ধ থাকলেও বেওয়ারিশ কুকুরকে ভ্যাকসিনেশনের কোনো পরিকল্পনাই নেই বলে জানা গেছে। এছাড়া কুকুরে কামড়ানো রোগীকে চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন দেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই সিটি করপোরেশন বা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে। তাই প্রতিদিন কুকুরের আক্রমণের শিকার ব্যক্তিরা ছুটছেন নগরীর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও ভ্যাকসিনের স্বল্পতা। সর্বনিম্ন সাড়ে ৫০০ টাকা থেকে প্রতিটি ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষের কিনতে হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

অন্যদিকে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেই কুকুরে কামড়ানো রোগীর কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন। সচেতন নাগরিকরা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, একদিকে প্রাণিকল্যাণ সংগঠনগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ আছে। তার ওপর সরকার ‘প্রাণিকল্যাণ বিল- ২০১৯’ পাস করার মাধ্যমে মালিকবিহীন কোনো প্রাণী হত্যা করলে ৬ মাসের জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করেছে। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধে যদি সরকার আইন করতে পারে, তবে এই বেওয়ারিশ কুকুরের প্রজনন বন্ধ বা তাদের জলাতঙ্করোধী ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থাও করা উচিত ছিল। এখন এই বেওয়ারিশ কুকুরের নিষ্ঠুরতায় আমাদের শিশুরা যে যন্ত্রণা ভোগ করছে তা দেখার দায়িত্ব কার?

নগরীর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসেই কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ২৩৭ জন। গড় হিসাবে দৈনিক ৪১ জন কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছেন অক্টোবরজুড়ে। ১ নভেম্বর সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১৪২ জন রোগী হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। এর মধ্যে মারাত্মক আক্রমণের শিকার হয়েছেন ৩২ জন।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে সিংহভাগই শিশু। যাদের বয়স ৪ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এছাড়া বৃদ্ধরাও কুকুরের কামড়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কেবল ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালেই (ভিক্টোরিয়া) কুকুরের কামড় ও জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ভিক্টোরিয়ার জরুরি বিভাগের পাশেই একটি কক্ষে দেওয়া হয় কুকুরের কামড়ের ভ্যাকসিন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ওই কক্ষে চলে ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম। এই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে গেলে সরকারি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন রোগীরা।

তবে দুপুর আড়াইটার পর কিংবা রাতে চিকিৎসা নিতে গেলে বাইরের ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করে তা প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এই রোগীর কোনো হিসাব বা তালিকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাখে না। তাই অক্টোবর মাসে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সামগ্রিক হিসেব নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ২৩৭ এর চেয়েও ঢের বেশি বলে ধারণা করছে হাসপাতাল সূত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেনারেল হাসপাতালের জলাতঙ্ক রোগের এক ভ্যাকসিনেটর জানান, হাসপাতালে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। তবে অক্টোবরে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। তখন বাইরে থেকে ক্রয় করে ইনজেকশন দিতে হয়েছে। রোগীদের ‘র্যা বিক্স-ভিসি’ নামক ইনজেকশন দেওয়া হয়। বাইরে এই ইনজেকশনের মূল্য ৫৫০ টাকা। আর কামড়ের জখম যদি মারাত্মক হয় তাহলে ‘র্যা বিক্স-আইজি’ নামক ২টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। এটির ১টির মূল্য ১ হাজার টাকা করে। ‘র্যা বিক্স-আইজি’ নামক ইনজেকশনটি মহাখালী হাসপাতাল থেকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে স্বল্পসংখ্যক সরবরাহ করা হয়। অক্টোবর মাসে মাত্র ২৫০টি র্যা বিক্স-আইজি ইনজেকশন এসেছিল। অথচ আমাদের মারাত্মক রোগীর সংখ্যা অনেক। মঙ্গলবারও ৩২ জন মারাত্মক জখমি রোগী এসেছিলেন।

এদিকে মঙ্গলবার হাসপাতালে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজনরা জানান, সন্ধ্যায় চিকিৎসার জন্য আসলেও জলাতঙ্ক বিভাগ বন্ধ থাকায় সরকারি ওষুধ সুবিধা পাননি তারা। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন মতে বাইরের ফার্মেসি থেকে ২ হাজার টাকা খরচে র্যা বিক্স-আইজি নামক ২টি ইনজেকশন কিনতে হয়েছে তাদের প্রত্যেককে।

মধ্যবিত্ত বা গরিবদের জন্য এই দাম সহনীয় নয় বলে তারা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এই ভ্যাকসিন অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এটা সরকারিভাবে সরবরাহ করা উচিৎ। কারণ মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধের আশায় সরকারি হাসপাতালে আসে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো রোগীর ইনজেকশন পর্যাপ্ত আছে। তবে মাঝে মধ্যে এটা শর্ট পড়ে। আর বেশি কামড়ের শিকার যারা হয়, তাদের জন্য র্যা বিক্স- আইজি ইনজেকশন দিতে হয়। এই ইনজেকশনটা আমাদের হাসপাতালে কম আসে। তাই অনেক সময় বাইরে থেকে ক্রয় করতে হয়। তবে, দরিদ্র বা অসহায়দের জন্য আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা আছে। সমাজকল্যাণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে আমরা তাদের ব্যবস্থা করে দেই।

তিনি বলেন, রাস্তায় কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কুকুর কন্ট্রোল করা অথবা ভ্যাকসিনেটেড করা উচিৎ। গত ২-৩ বছর আগে একবার ভ্যাকসিনেটেড কার্যক্রম দেখেছিলাম। এখন আর এটা হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ আছে, সিটি এলাকায় এটা তারা দেখভাল করবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা আলী জানান, সিটি করপোরেশনে বা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কুকুরের ভ্যাকসিন দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই বা কার্যক্রমও নেই। তবে আগে ডিজি হেলথ থেকে বাজেট ছিল, তখন ভ্যাকসিন ছিল।

তিনি জানান, কয়েক বছর আগে একটি পাইলট প্রজেক্টের আওতায় বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়ার একটা প্রোগ্রাম হয়েছিল কিন্তু এখন কোনো পরিকল্পনা নেই।

ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম