Logo
Logo
×

সারাদেশ

মেলায় স্বর্ণে মোড়ানো কলম দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়

Icon

এ হাই মিলন, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম

মেলায় স্বর্ণে মোড়ানো কলম দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়

কলম আমাদের একটি প্রয়োজনীয় বস্তু। অনেকেই দামি কলম কেনেন। অনেকে প্রিয়জন কিংবা বন্ধু-বান্ধবীকে কলম উপহার দেন। তবে সেটা ৫শ থেকে হাজার টাকায়। কিন্তু স্বর্ণে মোড়ানো কলম উপহার দেওয়ার খবর খুব কমই শোনা যায়। আর প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য এবার বাণিজ্য মেলায় শোভা পাচ্ছে স্বর্ণে মোড়ানো কলম।

এবার পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় একটি দৃষ্টিনন্দন কলম শোভা পাচ্ছে। জাপানি প্রতিষ্ঠান পাইলট কোম্পানির তৈরি এ কলমটির দাম হাঁকা হয়েছে ২৬ হাজার টাকা।

এ কমলটির নিবে আঠারো ক্যারেটের স্বর্ণ মোড়ানো। কলমটি ক্যালিগ্রাফি, কারসিভ ধরনের লেখা, স্বাক্ষর করা, সনদপত্র লেখা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। কলমটি দেখতে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা স্টলে ভিড় করছেন।

বাণিজ্য মেলার মূল প্যাভিলিয়নের ভিতরে জাপানি প্রতিষ্ঠানের পাইলট কোম্পানি বাহারি কলম দিয়ে স্টল সাজিয়েছে।  প্রতিদিন দর্শনার্থীরা কলমের এ স্টলে ভিড় করছেন। আর স্বর্ণে মোড়ানো কলমটি নেড়ে-চেড়ে দেখছেন।

স্টলের সামনেই কথা হয় ব্যাংকার ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটকালে আমরা পাইলট কলম ব্যবহার করেছি। এখন তো পাইলট কলমই দেখা যায় না। তার ওপর সোনায় মোড়ানো পাইলট কলম এটা কি ভাবা যায়? কলমটি দেখেছি। অসাধারণ।

এদিকে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব হাসনাহেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কলমটা দেখে অবাক হয়েছি। জীবনে অনেক কলম দেখছি। স্বর্ণমোড়ানো কলম এটা আসলেই অসাধারণ।

কোম্পানির হেড অব অ্যাডমিন মঞ্জিল আহমেদ যুগান্তরের প্রতিনিধিকে জানান, কলমটির প্রস্তুতকারক স্বয়ং জাপানি কোম্পানির পাইলট। ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে খচিত কলমটির দাম ২৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশে পাইলট কলমের একমাত্র পরিবেশক কিউ অ্যান্ড কিউ ট্রেডিং লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। ১৮ ক্যারেট মানের  সোনার প্রলেপ দেয়া কলমের নিবটির ওজন ৩০ গ্রাম। এই কলমটির মডেল ৮২৩। এই মডেলের কলম মেলায় দুই রংয়ের আনা হয়েছে একটি কালো অপরটি ক্লিয়ার রঙের।

তিনি জানান, এখানে আরও রয়েছে ক্যাপ লেস ফাউন্টেন কলম। যার দাম ১৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। এ ধরনের কলমের নিবেও ব্যবহার করা হয়েছে সোনার প্রলেপ। এই স্টলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও চাহিদা সম্পন্ন কলমটি হচ্ছে মেট্রোপলিটন ফাউন্টেন পেন যার মূল্য ২ হাজার টাকা। এছাড়া সাধারণ লেখালেখির জন্য ভিন্ন সিরিজের কলম গুলো জনপ্রিয়; যার মূল্য ১১০ থেকে ১৩০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে সর্বনিম্ন কলমের দাম ২৫ টাকা থেকে শুরু সর্বশেষ ২৬ হাজার টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য মেলায় পাইলট কোম্পানি স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া এটি কলম নিয়ে এসেছে। এতে প্রতিদিনই কৌতূহলী দর্শনার্থী কলমটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। ভবিষ্যতে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে মেলায় আরও উন্নতমানের আন-কমন পণ্য নিয়ে আসা হবে।

২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রসাধনী স্টলে নারীদের ভিড় বেড়েছে । তাদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিয়োগ দিয়েছেন। মেলা ক্রমেই জমতে শুরু করেছে বেচাকেনা। বেড়েছে দর্শনার্থী। ব্যবসায়ীরাও ছাড় দিতে শুরু করায় দর্শনার্থীরা এখন শুধুই দেখছেন না। পণ্য ক্রয় করেই মেলা ছাড়ছেন।

১৩০ টাকার পণ্যের স্টলে ক্রেতাদের দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। এদিকে মেলার বাইরের পরিবেশ নিয়ে বিব্রত ও হয়রানির কথা জানালেন দর্শনার্থীরা। শুধু তাই নয়, মেলার ভেতরে ১৬ দিন পরেও নতুন নতুন স্টল নির্মাণ করতে দেখা গেছে অনেককেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এবার সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও গত রোব ও সোমবার দিনভর মেলায় ছিল লক্ষাধিক লোকের সমাগম।  

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালেও দর্শনার্থী তেমন উপস্থিতি না থাকলেও দুপুরের পর থেকে মেলার প্রবেশ করতে দেখা গেছে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীদের। বেচাকেনাও হয়েছে বেশ। মেলার অভ্যন্তরীণ প্যাভিলিয়ন ও সল্টগুলো ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।

শীতের কাপড়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়। ফলে বেড়েছে বেচাকেনা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। এদিকে মেলায় আয়োজকরা প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

আর বেশি ক্রেতা পেয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়োজিত লোকজন ক্রেতাদের হাতে ধরে স্টল পরিদর্শনে আহ্বান জানাচ্ছেন তাদের সাজানো স্ব স্ব পণ্য দেখাতে। তাদের অনেকেই ছাড় দিতে শুরু করেছেন। এ ছাড়ের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো দর্শনার্থীদের পণ্যমূল্য নিয়ে রয়েছে অভিযোগ।

মেঘনা থেকে মেলায় ঘুরতে আসা রুহুল আমিন বলেন, মেলার সব পরিস্থিতি ভালো লাগলো তবে বাইরের পরিবেশে ক্রেতাবান্ধব নয়। আবার মেলার ভেতরের কিছু পণ্যের দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে। ক্রয় করতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। ১৩০ টাকার পণ্যের দোকানে ভিড় দেখা গেছে নারী ক্রেতাদের। তবে গত বছর যে পণ্যের দাম ৯৯ টাকা ছিল এবার তা ১৩০ টাকা করা হয়েছে।

পাড়াগাঁও এলাকার মেলায় ঘুরতে আসা সুমি ইসলাম বলেন, মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন ও আয়োজন আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। তবে ভেতরে থাকা পণ্যগুলোর বেশিরভাগ চকবাজার থেকে আনা বলে মনে হচ্ছে। তারা বিদেশি বললেও সব পণ্য তা নয় মনে হলো। আর মেলার ভেতরে এখনো নতুন স্টল প্রস্তুত হচ্ছে। তাও নিম্নমানের সাজানো; যা ভালো লাগেনি।

মেলা ঘুরতে আসা রুপসি এলাকার আলম মিয়া বলেন, এবার মেলায় আগত দর্শনার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো থাকায় লোকজন আসছে বেশি। তবে মেলার ভেতরের কিছু স্টলের কাজ চলায় পরিবেশ বিব্রতকর। অন্যদিকে বিআরটিসি বাসের ভাড়া আর স্থানীয় পরিবহনের সব ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় ভোগান্তিও রয়েছে। 

মেলার ১৬ দিনের দিনেও স্টল নির্মাণ কাজ করা শ্রমিক বাবুল মিয়া বলেন, স্টলটি খালি পড়ে ছিল, গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী কোনো কায়দায় দুটি স্টল ম্যানেজ করেছে দেরিতে। তাই কাজ পরে শুরু করেছে। আবার শুনছি মেলার মেয়াদ বাড়াবে। তাই আরও ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মেলায় আসা দর্শনার্থীদের তথ্য ও নিরাপত্তা জনিত সহায়তায় রয়েছে স্থানীয় ১৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। তাদের সহযোগিতা পেয়ে খুশি দর্শনার্থীরা।

আড়াইহাজার থেকে আসা সোনামিয়া বলেন, টিকেট কাটতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কিছুটা হয়রানি হতে হয়েছে। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করি।

স্বেচ্ছাসেবক টিম লিডার আবদুল আজিজ বলেন, মেলায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় দর্শনার্থীরা প্রবেশ, ভ্রমণ, মালামাল নিরাপত্তাসহায়তা পাচ্ছে। তারা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, হকারদের দ্বারা প্রতারিত না হয়, এসব বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করছি।

চনপাড়া এলাকার বাসিন্দা লিটন মিয়া বলেন, স্থানীয় লোকদের মেলায় প্রবেশের একমাত্র রাস্তা মুশুরী থেকে হাবিননগর ৪ কিলোমিটার পুরোটাই অচল। এ সড়কে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে দিগুণ তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে; যা ভোগান্তির শামিল।

পূর্বগ্রাম স্কুলের শিক্ষক মোতালেব বলেন, বাণিজ্য মেলা রূপগঞ্জে হওয়াতে স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এবার গতবারের তুলনায় দর্শনার্থী হচ্ছে বহুগুণ বেশি।

তিনি আরও বলেন, এতদিন স্কুলে ভর্তি নিয়ে ব্যস্ততা থাকায় লোকজন কম হলে হলেও এখন জমে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ।

নগরপাড়া এলাকার তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আইয়ান রহমান বলে- এবার বাণিজ্য মেলায় শিশুপার্ক রাখায় আমাদের ভালো লেগেছে। তবে মেলার খেলনা পণ্যের দাম রাখা হচ্ছে বেশি।

সূত্র জানায়, এবার মেলায় সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরাঁসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবার দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৩৩টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। এছাড়া গতবার শিশুপার্ক ছিল না, এবার মিনি শিশুপার্ক রয়েছে। যদিও এটি বেসরকারি উদ্যোগে। আবার দর্শনার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য ৫০টি শাটল বাস চালু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন। বাসের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করলে যাত্রীরা ৫০ শতাংশ ছাড়ও পাবেন।

এবার মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ফ্রি।

মেলা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

নারায়ণগঞ্জ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম