কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে একই স্কুলের সভাপতি মনিরুল ইসলামকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বারবান্ধা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন মারধরের শিকার সভাপতি।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে ভুক্তভোগী সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ দুইজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অন্য আসামি হলেন একই গ্রামের নুর হোসেনের ছেলে রঞ্জু মিয়া (৪০)।

রৌমারী থানার ওসি রূপকুমার সরকার জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হবে।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মারধরের ঘটনায় মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার শরীরে মারধরের ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন আছে।

থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত মোট ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫০২ টাকা যৌথ হিসাব নাম্বারে জমা হয়। তৎকালীন সভাপতি আইয়ুব আলীর মেয়াদ শেষ হলে গত বছর মনিরুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে প্রধান শিক্ষকসহ ব্যাংকে যৌথ হিসাব খুলতে যান সভাপতি মনিরুল ইসলাম।

এ সময় তিনি দেখেন ব্যাংকে জমানো কোনো টাকা নেই। সন্দেহ হলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে সমস্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম।এ পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্ত এবং প্রতিকার চেয়ে রোববার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন সভাপতি।

এতে ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই সভাপতি বারবান্ধা বাজার এলাকায় গেলে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ ভাতিজা রঞ্জু মিয়া তাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করেন। এ সময় স্থানীয়রা ওই সভাপতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

স্কুলের তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী বলেন, আমি এক বছর যাবৎ অসুস্থ। সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানি না এবং আমাকে জানানো হয়নি। আমার স্বাক্ষর জাল করে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার অসুস্থতার খবর শুনেও একবারের জন্য দেখতে আসেনি এই প্রধান শিক্ষক।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী অসুস্থতার কারণে সব কিছু ভুলে গেছেন। তার স্বাক্ষরেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সভাপতিকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার ভাতিজা রঞ্জু মিয়ার সাথে ঘটেছে। এর সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম সরোয়ার রাব্বী বলেন, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।