আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে বিয়ে করা গিয়াসকে নিয়ে নাটক
মো. শফিকুল ইসলাম, সালথা (ফরিদপুর)
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম
ভূমিহীন মো. গিয়াস উদ্দীন শেখ। ছয় বছর বয়সে তার বাবা-মা মারা যান। অল্প বয়সে তিনি বাবা-মাকে হারিয়ে ছোট দুই বোন নিয়ে দাদির কাছে থেকে বেড়ে ওঠেন। বড় হয়ে দিনমজুরের কাজ করে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দেন।
তবে সম্পত্তি আর বাড়িঘর না থাকায় গিয়াসের বয়স ৩০ পার হয়ে গেলেও তিনি বিয়ে করতে পারেননি। ভূমিহীন ছেলের সঙ্গে কেউ মেয়েও বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর গিয়াসকে উপহার দেন। ওই ঘর পেয়েই বিয়ে করার সুযোগ পান তিনি।
গিয়াস ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত বতু শেখ ও হাসিনা বেগম দম্পতির ছেলে। তিনি বর্তমানে মাঝারদিয়ার কুমারপট্টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে নববধূকে নিয়ে বসবাস করছেন।
এদিকে গিয়াসের জীবন কাহিনীসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের নিয়ে একটি নাটকের গল্প লিখেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন।
নাট্যকার শাহিনের সেই গল্পে সেলিম রেজা সেন্টু নির্মাণ করছেন নাটক ‘স্বপ্নের ঠিকানা’। রোববার সকাল থেকে কুমারপট্টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে নাটকের শুটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। শাহিন নিজেও এতে অভিনয় করেছেন। আরও অভিনয় করেছেন তারিক স্বপন, সিলভিয়া, জুয়েল, মোমিন, জয়সহ বেশ কয়েকজন। শুটিং উপলক্ষে গিয়াসের ঘরে সাজানো হয়েছে নবদম্পতির বাসর ঘর।
গত ২৫ জানুয়ারি তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলেও রোববার আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। আর এসব দৃশ্য ধারণ করে নেওয়া হচ্ছে নাটকের অংশ হিসেবে।
ভূমিহীন গিয়াস উদ্দীন শেখ যুগান্তরকে বলেন, আমি উপার্জন সক্ষম হয়ে দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করেছি, তা দিয়ে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বাড়ি বা কোনো সহায়-সম্পত্তি করতে পারিনি। যে কারণে আমি নিজে বিয়ে করতে পারছিলাম না। বাড়িঘরহীন ছেলের সঙ্গে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, পরে ঘটনাটি ইউএনও স্যারকে জানালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘর উপহার দেন। ওই ঘর পাওয়ার পর আমি বিয়ে করেছি। ঘর উপহার দিয়ে আমাকে সংসার করার সুযোগ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে ইউএনও স্যারকেও ধন্যবাদ।
গিয়াসের চাচি সবজান বেগম যুগান্তরকে বলেন, অল্প বয়সে গিয়াসের বাবা-মা মারা যায়। তাদের কোনো বাড়িঘর ছিল না। তাই গিয়াস বিয়েও করতে পারেনি। পরে সরকারি ঘর পাওয়ার পর গত ২৫ জানুয়ারি গিয়াস আমাদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী নগরকান্দার ফুলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে রিতু আক্তারকে দেখতে যায়। সেখানে মেয়েপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায় উভয় পরিবারের সম্মতিতে গিয়াস-রিতুর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহিন যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের মূলস্রোতে আনার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ শুরু করেন। সেই উদ্যোগে সালথায় ৬৩৩টি ঘর এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর যেসব উপকারভোগীদের দেওয়া হয়েছে, তারা এখন সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। তাদের অনেক সফলতা আছে, সেই সফলতার গল্পকে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি। কুমারপট্টি আশ্রয়ণে আমরা একটি ভিন্নতর সফলতা দেখেছি। সেই গল্পটি তুলে ধরে আমি একটি নাটক লিখেছি।
তিনি আরও বলেন, নাটকের মূল বিষয় হলো গিয়াস। যাকে আমরা একটি ঘর উপহার দিয়েছি। তিনি চার বছর বয়সে তার মাকে হারায়, ছয় বছর বয়সে বাবাকে হারায়। দুটি বোন ও এক ভাই মিলে প্রথমে দাদি ও পরে চাচার কাছে বসবাস করত। সেই কষ্টকর জীবনের মধ্যদিয়ে গিয়াস তার দুটি বোনকে বিয়ে দিয়েছে। অথচ নিজে বিয়ে করে সংসার পাতার মতো কোনো স্বপ্ন সে দেখতে পারেনি। কারণ তার জমিও নাই ঘরও নাই। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই শতাংশ জমিসহ একটি ঘর দিয়েছি। ঘর দেওয়ার পর তার মধ্যে বিয়ে করে সংসার করার যে স্বপ্ন ছিল, তা বাস্তবায়ন হয়েছে। আমি এই সম্পূর্ণ ঘটনাকে নিয়ে একটি গল্প বানিয়েছি। সেই গল্পের ওপর ভিত্তি করেই এই নাটক নির্মিত হচ্ছে।