Logo
Logo
×

সারাদেশ

তথ্য গোপন করে পোষ্য কোটায় শিক্ষিকার চাকরি নেওয়ার অভিযোগ

Icon

সুকুমল কুমার প্রামাণিক, রাণীনগর (নওগাঁ)

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:০৫ পিএম

তথ্য গোপন করে পোষ্য কোটায় শিক্ষিকার চাকরি নেওয়ার অভিযোগ

নওগাঁর রাণীনগরে বিবাহিত হয়েও সরকারি চাকরির আবেদনে অবিবাহিত লিখে তথ্য গোপন করে পোষ্য কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। 

ওই শিক্ষিকা রাণীনগর উপজেলার ছাতারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করে চাকরি করছেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় চলছে নানা সমালোচনা।

শিক্ষিকা সাবিনা তার বাবার পোষ্য কোটায় সরকারি চাকরি হাতিয়ে নিতে উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের অফিস প্যাড ও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর এবং সিল জাল করে অবিবাহিত প্রত্যয়নপত্র বানান। আর এ কারণে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর সম্প্রতি কালীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব চাঁন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০২২ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউপির ছাতারদিঘী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাফ্ফর হোসেনের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন চূড়ান্ত পরীক্ষায় পোষ্য কোটায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সাবিনা বিবাহিত এবং তার একটি সন্তান রয়েছে। সন্তানের বয়স ৭ বছরের বেশি। একই ইউপির ভেটি গ্রামে সাবিনার বিয়ে হয়েছে। তার স্বামীর নাম রাজু আহম্মেদ। কিন্তু সাবিনা কালীগ্রাম ইউপির অফিস প্যাড ও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর এবং সিল জাল করে একটি অবিবাহিত প্রত্যয়ন বানা। পরে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সেটি ব্যবহার করেছে মর্মে জানতে পেরে সাবিনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ১ ফেব্রুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালে সাবিনা ইয়াসমিনের বিয়ে হয় ভেটি গ্রামের রাজুর সঙ্গে। বিয়ের পর তাদের ঘরে এক সন্তানের জন্ম হয়। সেই সন্তান নিয়েই সাবিনা ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ২০২০ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হলে সাবিনা এতে সহকারি শিক্ষক পদে আবেদন করেন। ওই আবেদনে তথ্য গোপন করেন সাবিনা। তিনি বিবাহিত হলেও বাবার পোষ্য কোটায় সরকারি চাকরি হাতিয়ে নিতে অবেদনে লিখেন অবিবাহিত। এর পর ২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। তার পর থেকে শুরু হয় তার জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া। 

অভিযোগ মতে, শিক্ষক নিয়োগ মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষায় পোষ্য কোটায় চাকরি পেতে সাবিনা কালীগ্রাম ইউপির অফিস প্যাড ও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর এবং সিল জাল করে একটি অবিবাহিত প্রত্যয়নপত্র তৈরি করেন। আর এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। তার কর্মস্থল হয় রাণীনগর উপজেলার ছাতারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। 
নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি সাবিনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন। পরের দিন ২৩ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে যোগদান করে। ওই বিদ্যালয়ে সাবিনা শিক্ষিকা হিসাবে যোগদানের পর তার পোষ্য কোটায় চাকরি হওয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হয়। এর পর থেকে শুরু হয় এলাকায় নানা সমালোচনা। 

এরই মধ্যে কালীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান গোপনসূত্রে জানতে পারেন সাবিনা বিবাহিত সন্তানের মা হয়েও চেয়ারম্যান কর্তৃক অবিবাহিত প্রত্যয়নপত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে দাখিল করে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। ওই প্রত্যয়নটি ইউপি চেয়ারম্যান না দেওয়ায় সাবিনার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।

রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব চাঁন জানান, কোনো দিন সাবিনা ইয়াসমিনকে অবিবাহিতের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি। পরিষদ থেকে কোনো ব্যক্তিকে প্রত্যয়ন দিলে তা আমাদের রেজিস্টারে থাকে। তাকে ইউপির স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে একটি প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে।  

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, সাবিনা বিবাহিত মেয়ে, তার একটি সন্তানও রয়েছে। তাকে অবিবাহিতের প্রত্যয়ন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। সাবিনা বিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদানের কিছু দিন পর গোপনসূত্রে তার প্রত্যয়ন জালিয়াতির বিষয়টি আমি জানতে পেরে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদ্য যোগদানকৃত ছাতারদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমার বিয়ের আনুমানিক ৫ মাস পর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি। 

তিনি দাবি করে বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ থাকা অবস্থায় শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছি। তাই আবেদনে অবিবাহিত দিয়েছি। ২০২১ সালে পারিবারিকভাবে সমঝোতায় পুনরায় আমরা দুজনে একত্রিত হই। 

ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়নপত্র জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবিনা বলেন, অবিবাহিতের প্রত্যয়নপত্র আমার বাবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিয়ে এসেছেন। তারা প্রত্যয়ন জালিয়াতি করেননি বলেও দাবি করেছেন তিনি।

শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াসমিনের দাবির সত্যতা যাচাইয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে নামে যুগান্তর। কথা হয় সাবিনার স্বামীর ভেটি গ্রামের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। ওই গ্রামের বাসিন্দা কোরবান, সোলাইমান, রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন বলেন, বিয়ের পর থেকে সাবিনা ও তার স্বামী রাজু আজ পর্যন্ত একসঙ্গেই আছেন। তাদের কখনো কোনো দিন বিচ্ছেদ হয়নি। তাদের দুজনের সন্তানও রয়েছে। সাবিনা ও তার স্বামীর মধ্যে বিচ্ছেদের বিষয়টি মিথ্যা বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আবু রায়হান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের দায়ের করা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কিছুদিন আগে দুইপক্ষকে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ তথ্য গোপন করে এবং জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাকরি নিয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষিকা ইয়াসমিন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম