বৃষ্টির বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যুগান্তরের স্বজনরা
অভাব-অনটনের মধ্যে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে জন্ম নেওয়া মেধাবী বৃষ্টি খাতুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি নাটোরের সিংড়া পৌর শহরের নিংগইন মহল্লার দিনমজুর বিদ্যুৎ আলীর মেয়ে। বৃষ্টি খাতুনের পুরো মহল্লায় এখন আনন্দের জোয়ার বইছে।
মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগে সোমবার বিকাল ৫টায় তার বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হন সিংড়া উপজেলা যুগান্তর স্বজন সমাবেশের আহ্বায়ক হাসিবুল হাসান শিমুল ও যুগান্তর প্রতিনিধি সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বৃষ্টি খাতুনের মেধা তালিকা ৭৬৫তম। এক ঘণ্টা সময়ের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় বৃষ্টি খাতুন পেয়েছেন ৭৫ দশমিক ২৫। তার মেরিট স্কোর ২৭৫ দশমিক ২৫। তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।
বৃষ্টি খাতুন ২০২০ সালে সিংড়ার নিংগইন জোড়মল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরে ২০২০ সালের ৮ জুন যুগান্তরের ১৪ পৃষ্ঠায় ‘অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন সিংড়ার চলনবিলের কয়ড়াবাড়ি গ্রামের কৃতীসন্তান বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম ইউসুফ আলী। আর নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর নির্মাণ করে দেন তৎকালীন ইউএনও এবং বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাসরিন বানু।
পরে ১০ জুন ‘সিংড়ার বৃষ্টির স্বপ্ন পূরণ’ শিরোনামে যুগান্তরে ছবিসহ ফলোআপ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর এইচএসসি পরীক্ষায় সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
শিক্ষার্থী বৃষ্টি খাতুন বলেন, মানুষের সহযোগিতায় আমি ডাক্তার হতে যাচ্ছি। তাই সারা জীবন অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই।
বৃষ্টির মা মুন্নি আরা যুগান্তর পত্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তিনি মেয়ের জন্য সবার দোয়া কামনা করেন।
সিংড়ার বর্তমান ইউএনও মাহমুদা খাতুন বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে জীবনযুদ্ধে জয়ী একটি মেধাবী মেয়ে বৃষ্টি খাতুন। আর একজন দিনমজুরের মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ হয়েছে এটা বড় আনন্দের বিষয়। শুনেছি ইতোপূর্বে তার ভালো ফলাফলের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও মেধাবী বৃষ্টিকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম ইউসুফ আলী বলেন, বৃষ্টি তার কথা রেখেছে। ২০২০ সালে যখন তার বাড়িতে গিয়ে তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন; তখন সে বলেছিল সে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। আজ সে মেডিকেলে চান্স পেয়ে প্রমাণ করেছে সত্যিই সে পরিশ্রমী এবং মেধাবী। সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আগের মতোই, ডাক্তার না হওয়া পর্যন্ত তার লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার আমরা বহন করব। মেডিকেল কলেজে ভর্তি এবং সেখানকার যাবতীয় খরচ নিয়ে তার কোনো চিন্তা নাই, ওর চিন্তা শুধুই লেখাপড়া।
এ বিষয়ে তৎকালীন সিংড়ার ইউএনও এবং বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাসরিন বানু মোবাইল ফোনে বলেন, বৃষ্টির এ সাফল্যের কৃতিত্ব দৈনিক যুগান্তর পরিবার ও পত্রিকার। ২০২০ সালে যুগান্তরে তার জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে ‘অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার’ সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মিত হয়েছে এবং স্থানীয় একজনের সহযোগিতায় লেখাপড়া চলছে। তাই মনে করি এর কৃতিত্বের অধিকারী যুগান্তর পরিবার। আর বৃষ্টির চেষ্টা ছিল, তার জন্যও অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
বৃষ্টির বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যুগান্তরের স্বজনরা
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
১৩ মার্চ ২০২৩, ২২:৪৪:১৪ | অনলাইন সংস্করণ
অভাব-অনটনের মধ্যে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে জন্ম নেওয়া মেধাবী বৃষ্টি খাতুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি নাটোরের সিংড়া পৌর শহরের নিংগইন মহল্লার দিনমজুর বিদ্যুৎ আলীর মেয়ে। বৃষ্টি খাতুনের পুরো মহল্লায় এখন আনন্দের জোয়ার বইছে।
মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগে সোমবার বিকাল ৫টায় তার বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হন সিংড়া উপজেলা যুগান্তর স্বজন সমাবেশের আহ্বায়ক হাসিবুল হাসান শিমুল ও যুগান্তর প্রতিনিধি সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বৃষ্টি খাতুনের মেধা তালিকা ৭৬৫তম। এক ঘণ্টা সময়ের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় বৃষ্টি খাতুন পেয়েছেন ৭৫ দশমিক ২৫। তার মেরিট স্কোর ২৭৫ দশমিক ২৫। তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।
বৃষ্টি খাতুন ২০২০ সালে সিংড়ার নিংগইন জোড়মল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরে ২০২০ সালের ৮ জুন যুগান্তরের ১৪ পৃষ্ঠায় ‘অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন সিংড়ার চলনবিলের কয়ড়াবাড়ি গ্রামের কৃতীসন্তান বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম ইউসুফ আলী। আর নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর নির্মাণ করে দেন তৎকালীন ইউএনও এবং বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাসরিন বানু।
পরে ১০ জুন ‘সিংড়ার বৃষ্টির স্বপ্ন পূরণ’ শিরোনামে যুগান্তরে ছবিসহ ফলোআপ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর এইচএসসি পরীক্ষায় সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
শিক্ষার্থী বৃষ্টি খাতুন বলেন, মানুষের সহযোগিতায় আমি ডাক্তার হতে যাচ্ছি। তাই সারা জীবন অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই।
বৃষ্টির মা মুন্নি আরা যুগান্তর পত্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তিনি মেয়ের জন্য সবার দোয়া কামনা করেন।
সিংড়ার বর্তমান ইউএনও মাহমুদা খাতুন বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে জীবনযুদ্ধে জয়ী একটি মেধাবী মেয়ে বৃষ্টি খাতুন। আর একজন দিনমজুরের মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ হয়েছে এটা বড় আনন্দের বিষয়। শুনেছি ইতোপূর্বে তার ভালো ফলাফলের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও মেধাবী বৃষ্টিকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম ইউসুফ আলী বলেন, বৃষ্টি তার কথা রেখেছে। ২০২০ সালে যখন তার বাড়িতে গিয়ে তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন; তখন সে বলেছিল সে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। আজ সে মেডিকেলে চান্স পেয়ে প্রমাণ করেছে সত্যিই সে পরিশ্রমী এবং মেধাবী। সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আগের মতোই, ডাক্তার না হওয়া পর্যন্ত তার লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার আমরা বহন করব। মেডিকেল কলেজে ভর্তি এবং সেখানকার যাবতীয় খরচ নিয়ে তার কোনো চিন্তা নাই, ওর চিন্তা শুধুই লেখাপড়া।
এ বিষয়ে তৎকালীন সিংড়ার ইউএনও এবং বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাসরিন বানু মোবাইল ফোনে বলেন, বৃষ্টির এ সাফল্যের কৃতিত্ব দৈনিক যুগান্তর পরিবার ও পত্রিকার। ২০২০ সালে যুগান্তরে তার জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে ‘অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার’ সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মিত হয়েছে এবং স্থানীয় একজনের সহযোগিতায় লেখাপড়া চলছে। তাই মনে করি এর কৃতিত্বের অধিকারী যুগান্তর পরিবার। আর বৃষ্টির চেষ্টা ছিল, তার জন্যও অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023