জেসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে করা মামলা নিয়ে বিস্ময় স্বজনদের
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
র্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁর একটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪০) বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার স্বজন ও সহকর্মীরা। বুধবার জেসমিনকে র্যাব আটকের পরদিন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।
প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার গাজীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আল আমিন ও সুলতানা জেসমিনসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তি যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নাম ও পদবি ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু জেসমিনের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারছেন না তার স্বজন, প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা।
সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, আমার ভাগ্নি অত্যন্ত সাদামাটা একজন গৃহিণী। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ছোট্ট একটা চাকরি করে ছেলেটাকে মানুষ করছে সে। তার ছেলের লেখাপড়ার খরচের টাকা অনেক সময় আমাকে দিতে হয়। আর্থিক অনিয়ম করলে তো অভাব-অনটন থাকত না। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
নাজমুল হক বলেন, আমার ভাগ্নি একটা চক্রান্তের শিকার হয়েছে। আমার বিশ্বাস, সঠিকভাবে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
সুলতানা জেসমিন (৪০) নওগাঁ সদরের চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক পদে চাকরিরত ছিলেন। গত আট বছর ধরে শহরের জনকল্যাণপাড়ার দেলোয়ার হোসেন দুলালের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। প্রায় ১৭ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার। ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তার ভাড়া বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, সুলতানা জেসমিন দীর্ঘদিন ধরে তার বাসায় ভাড়া থাকলেও তার কোনো অস্বাভাবিক চলাফেরা কখনো চোখে পড়েনি। একদম ‘নিভৃতভাবে’ চলাফেরা করতেন। তার মতো মহিলা অন্যের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষকে প্রতারণা করবে এতে বিস্মিত তিনি।
চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোমেনা খাতুন বলেন, এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জেসমিনকে একজন ভালো সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। অতীতেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আমার জানামতে হয়নি। জেসমিন শান্তশিষ্ট মানুষ ছিল। তার প্রতারণার অভিযোগ উঠায় অবাকই হয়েছি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২২ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে রাজশাহী র্যাব-৫ এর একটি দল অভিযোগের ভিত্তিতে সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) আটক করে। পরে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুলতানা জেসমিন সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।
