|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শেরপুর শহরে একটি বানরের অবাধ আনাগোনা চোখে পড়ছে। বানরটি নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। বনের বানর এখন শহরবাসীর আপনজনে পরিণত হয়েছে। শহরে জীবনে বানর দেখে সব বয়সের মানুষই কিছুটা সময় আনন্দ উপভোগ করছেন।
বিশেষ করে শিশুরা বানর দেখতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। আবার অনেক শিশুর মনে একটি ভয় ভয় ভাব কাজ করে। তাই একটু নিরাপদ দূরে থেকে বানরকে দেখে এবং বানরকে খাবারও দেয়।
বানরকে হঠাৎ করে লোকালয়ে দেখে শহরের অনেকেই একটু নড়েচড়ে বসছেন। শেরপুর শহরে আনাচে-কানাচে এবং পাড়া-মহল্লায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে একটি বানর ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুরনো ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলায় বানরকে লোকালয়ে দেখা গেলেও শেরপুরে এই প্রথম। মাঝে-মধ্যে পোষ মানানো শেকলে বাঁধা বানরের বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখেছেন অনেকেই। তবে শেরপুর শহরে এর আগে বানর অবাধে আনাগোনা কবে দেখেছেন তা কেউ বলতে পারেন না।
শেরপুর শহরে যখন তখন একটি বয়স্ক বানরকে ঘোরাঘুরি করতে দেখতে এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন মানুষ। শহরে বসবাসরত বানরটি এখন সবার আনন্দের খোরাক হিসেবে কাজ করছে। শহরের এই বানরটি খাদ্যের জন্য বিভিন্ন স্থানের গাছে, টিনের চাল, দেয়ালে ও বিল্ডিংয়ের কার্নিশে অবস্থান করছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ির বাউন্ডারির দেয়াল দিয়ে চলাচল করছে। একটু ছায়া ঘেরা গাছপালা আছে এমন স্থানে বানরটি রাতযাপন করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
শহরের বিভিন্ন মহল্লার মানুষজন বানরটিকে এখন আপন করে নিয়েছেন। প্রতিদিন এলাকার মানুষজন বিস্কুট, কলা, ভাত বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে দিচ্ছেন। মানুষের ভালোবাসার এসব খাদ্যসামগ্রী কোনোরকম বাঁদরামি ছাড়াই শান্তভাবেই গ্রহণ করছে বানরটি। বানরটি কারো কোন ক্ষতি করছে না। সে তার মনের সুখে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে মাঝে মধ্যে ক্ষুধার জ্বালায় বিভিন্ন বাসাবাড়ির পেয়ারা ও আতাফল গাছে বসে ফল খেতে দেখা যায়।
বানরটি শেরপুর শহরে কিভাবে এলো সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে অনেকেরই ধারণা টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে কলা ও আনারস বহনকারী ট্রাকে বা বাসের ছাদে বসে বানরটি শেরপুর শহরে এসে থাকতে পারে।
শেরপুর শহরের গৃদানারায়ণপুরের বাসিন্দা রতন ভৌমিক বলেন, এই বানরডা দুই মাস ধইরা দেখতাছি। শেরপুর টাউনের সব জায়গাতেই ঘোরাফেরা করছে। তবে কারো কোনো ক্ষতি করে নাই এবং কোনো অঘটনও ঘটায় নাই। খাওয়া দিলে খায়। এভাবেই চলতাছে। এটা হয়তো মধুপুর থেকে আসছে।
একই এলাকার শিশু সূচিনূর আক্তার সূচি বলে, বানর আইছিল দেখছি। কলা দিছি বানর কলা খাইছে। বানর দেইখা আমি খুব খুশি।
নয়ানি বাজারের বাসিন্দা বৃদ্ধ অজিত চৌধুরী বলেন, অনেকেই বলছে বানর আসছে শেরপুরে। আইজ আমার চোখে পড়ছে। এ বানরটি মধুপুর থেকে বাসের ছাদে উঠে চলে আসছে বলে মনে হয়।
নয়ানি বাজারের আরেক বাসিন্দা কৌশিক চৌধুরী বলেন, নয়ানি বাজার মহল্লায় এই বানরটি মাঝে মাঝেই আসে। এখানে আইসা মানুষের গাছপালার ফলফলারি খেয়ে যায়। আমাদের কোনো অসুবিধা করে না, তবে মাঝে মাঝে আসে। নয়ানি বাজারের মঙ্গল চন্দ্র সাহার একটি খলার জঙ্গলে এসে রেগুলার থাকে। গাছের আতাফল ও পেয়ারা খায়। এমনে বাচ্চারা চিপস ও কলা দিলে খায়। ঘোরাফেরা করলেও কোনো ক্ষতি করে না।
একই মহল্লার বাসিন্দা সুরুজ মিয়া বলেন, বানরটা এই এলাকায় মাঝে মাঝেই আসে। আইসা বিভিন্ন গাছের ফল ফলাদি খায়। কেউ কেউ কলা, টমেটো ও বিস্কুট দিলে খাইয়া আবার চলে যায়। কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি করে না। এমনিতে গাছের ডালে, কারো ছাদে চলাফেরা করে। এটাই দেখা যাচ্ছে।
জেলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন, বানরটি কলার ট্রাকে করে এসে থাকতে পারে। শেরপুর শহরে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। আমাদের নজরদারিতে আছে। বানরটি এক স্থানে থাকছে না। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দল ছুট হয়ে বানরটি চলে এসেছে। দেশের অন্যান্য শহরেও বানর আছে। শেরপুরে নেই। তাই দল ছুট হয়ে আসা বানরটির জন্য শেরপুর শহরের মানুষের আগ্রহ একটু বেশি।
