শ্রীপুরে কারখানায় ৩ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ২
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২২ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলায় তিন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর হয়েছে মর্মে অবহেলার অভিযোগ এনে নির্মাণাধীন কারখানার মালিক সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার পরপরই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কারখানাটি কোনো ধরনের ইমারত আইন মেনে নির্মাণ কাজ পরিচালিত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষও নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন।
শুক্রবার সকালে নিহত নির্মাণ শ্রমিক মনোয়ার হোসেনের ভাই মো আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, স্টারনেট কোম্পানির ঠিকাদার ও নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বাবানী বাজার গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে ইব্রাহিম খান (৬০), স্টারনেট কোম্পানির প্রকৌশলী ও নওগাঁ জেলার পোরসা থানার কুলাডাঙ্গা গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে রাব্বানী (২৮) এবং স্টারনেট কোম্পানির মালিক চট্টগ্রাম জেলার পাচলাইস থানার মেহেদীবাগ গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে আরশাদ আলী (৬০)।
তাদের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ইব্রাহিম খান ও প্রকৌশলী রাব্বানীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত নির্মাণ শ্রমিকরা হলেন, নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরকচ্ছপিয়া গ্রামের আজাদ হোসেনের ছেলে প্রিয়াস (২০), একই গ্রামের বেলাল সওদাগরের ছেলে পাভেল (২৩) ও জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার উত্তর সারমারা গ্রামের মো. চাঁন মিয়ার ছেলে মনোয়ার হোসেন (২৫)।
নিহত নির্মাণ শ্রমিক মনোয়ার হোসেনের ভাই মামলার বাদী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ভাই মনোয়ার হোসেন দীর্ঘ দিন যাবত শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে ভাড়া থেকে স্থানীয় স্টারনেট কোম্পানিতে দৈনিক মজুরিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছে। তার ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগদান করে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আমার ভাইসহ তিনজনের মৃতদেহ দেখতে পাই। এ ঘটনায় কারখানার মালিক ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মাওনা জোনাল অফিসের ডিজিএম আহম্মদ শাহ আল জাবেদ বলেন, ১১ কেভি ভোল্টের সঞ্চলন লাইনের সঙ্গে তাদের কাজ করার আগেই আমাদেরকে অবহিত করা উচিত ছিল। তারা চাইলে আমরা লাইন বন্ধ করে সহযোগিতা করতে পারতাম। এদের মৃত্যুতে কারখানা কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী বলেন, একটি কারখানা নির্মাণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন শাখা থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। লাইসেন্স শাখার সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে কি ধরনের ছাড়পত্র নিয়েছে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল ফজল মো. নাসিম জানান, তিন নির্মাণ শ্রমিক নিহতের ঘটনার নিহত মনোয়ার হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিকে গ্রেফতার করতে কাজ করছে পুলিশ।
উল্লেখ, বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরে পৌরসভার কেওয়া পুর্বখণ্ড এলাকায় নির্মাণাধীন আরমাদা স্পিনিং মিলের বহুতল ভবনে লোহার রড তোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। লোহার রড বহুতল ভবনের ছাদে উঠানোর সময় রাস্তার পাশের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে লোহার রডের সংস্পর্শে বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
