মিথ্যা হত্যা মামলায় ২৭ মাস কারাভোগ, পুলিশসহ ৪ জনের নামে মামলা
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নিখোঁজ স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে ২৭ মাস কারাভোগ করায় লক্ষ্মীপুর আদালতে পুলিশসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মোহাম্মদ হোসেন নামের এক দরিদ্র জেলে।
রোববার দুপুরে লক্ষ্মীপুর আমলি ম্যাজিস্ট্রেট (রামগতি) আদালত ১১ জুন পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত এ মামলার প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশনা দেন।
মামলায় দ্বিতীয় স্ত্রী পারুল বেগমের বাবা-মা ও ভাই এবং এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত নারীর লাশকে পারুলের লাশ অভিহিত করে হত্যা মামলা সাজিয়ে হোসেন ও তার দুই মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
স্বামীর প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হচ্ছে শুনে দ্বিতীয় স্ত্রী পারুল বেগম ঢাকায় গৃহকর্তার বাসায় আত্মহত্যা করেন। আর এ ঘটনাকে গোপন করে হোসেনের বিরুদ্ধে পারুলের বাবা-মা ও ভাই হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় জেলে হোসেন ২৭ মাস লক্ষ্মীপুরে কারাভোগ করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর ‘নিখোঁজ গৃহবধূর আত্মহত্যা-মিথ্যা মামলায় ২৭ মাস জেল খাটার পর আদালতে মামলা’ এ শিরোনামে যুগান্তরের তৃতীয় পাতায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
রোববার বাদীর আইনজীবী আব্দুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারী সাংবাদিকদের জানান, জেলে হোসেনের মামলায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার সাবেক এসআই মজিবুর রহমান তফাদার, বাদীর শ্বশুর মো. বাহার মিস্ত্রি, শাশুড়ি হাজেরা বেগম ও শ্যালক বাবুলকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. বেলায়েত হোসেনের (রামগতি অঞ্চল) আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, রামগতির দরিদ্র জেলে হোসেনের (৪৬) প্রথম স্ত্রী দুই মেয়ে নূপুর (১৪) ও ঝুমুরকে (১২) রেখে মারা যান। এরপর তিনি পারুলকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে দুই ছেলে রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পারুল নিখোঁজ হলে হোসেন ২৫ সেপ্টেম্বর রামগতি থানায় জিডি করেন। এরই মধ্যে ১৪ অক্টোবর রামগতির একটি টাওয়ারের বাথরুমে অজ্ঞাত নারীর লাশ পাওয়া যায়। ওই লাশ পারুলের বলে দাবি করেন তার বাবা-মা।
ওই দিনই হোসেনকে আটক করে পুলিশ। হোসেনকে আসামি করে রাতেই হত্যা মামলা করেন। পারুলকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে হোসেন- এই বলে দুই মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে পুলিশ। পরের দিন তাদের দিয়ে বাবার বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় আদালতে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে নেয় এসআই আবদুল মজিদ দফাদার।
এ মামলায় ২৭ মাস কারাভোগের পর ডিসেম্বরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান হোসেন। এরপর হোসেন জানতে পারেন-সংসারের অভাব-অনটনের কারণে পারুল তার মা-বাবার পরামর্শে ঢাকার লালবাগের নিউ পল্টন রোডের একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। গার্মেন্টসে চাকরির কথা বলে ভাই বাবুল তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়।
অসহায় হোসেন জানান, শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালক পরিকল্পিতভাবে পারুলকে ঢাকায় লুকিয়ে রেখে অজ্ঞাতনামা অর্ধগলিত নারীকে তার (পারুল) লাশ হিসাবে শনাক্ত করে। মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়ে তাকে ২৭ মাস কারাভোগ করিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজনের বিচার চান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাহার, তার স্ত্রী হাজেরা বেগম ও ছেলে বাবুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রামগতি থানার সাবেক এসআই মজিবর রহমান তফাদার বলেন, মামলাটি আমার কাছে এক মাস থাকার পর সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই আশরাফ উদ্দিন বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী পারুলকে হোসেন হত্যা করেননি। পারুল ঢাকায় আত্মহত্যা করেন। দীর্ঘ তদন্তের পর মামলাটি মিথ্যা বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলের পর বিগত ৪ এপ্রিল আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে স্ত্রী হত্যায় দায়ের হওয়া মামলা থেকে মো. হোসেনকে অব্যাহতি দেন।
