Logo
Logo
×

সারাদেশ

বসতঘর তালাবন্ধ, বাইরে মেয়েকে নিয়ে কাঁদছেন গৃহবধূ

Icon

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৮ পিএম

বসতঘর তালাবন্ধ, বাইরে মেয়েকে নিয়ে কাঁদছেন গৃহবধূ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এক গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তাড়াতে এক বছর ধরে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী, ননদ ও ভাগ্নের বিরুদ্ধে। ৩৫ বছর বয়সি ওই গৃহবধূর নাম সীমা রানী বর্মণ। গৃহবধূ ও কিশোরী কন্যাকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। মা-মেয়েকে বাীড়তে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গৃহবধূ থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ অফিসার বাড়িতে গেলেও অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। কিন্তু বসতঘরের তালা খুলে না দেওয়ায় গত ছয়দিন ধরে ওই গৃহবধূ ঢুকতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ঘটনাটি পৌরসভার পশ্চিম কাঞ্চনপুর গ্রামের ৬নং ওয়ার্ড ঘোষ বাড়ি। গৃহবধূর স্বামী হারাধন একজন ভবঘুরে।

গৃহবধূ ও বাড়ির লোকজন জানায়, ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সালদা নদীর নয়নপুর গ্রামের নেপু চন্দ্র বর্মণের মেয়ে সীমা রানীকে আদালতের মাধ্যমে এক কিশোরীসহ দ্বিতীয় বিয়ে করেন রায়পুর পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে হারাধন চন্দ্র ঘোষ।

অভিযোগ উঠেছে, বিয়ের ১৩ দিন পর থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু। শ্বশুরবাড়ি থেকে ব্যবসার জন্য যৌতুক এনে দিতে না পারায় ননদসহ স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন শুরু হয়। গত এক বছর স্ত্রী ও কন্যা সন্তান ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যান হারাধন। মার্চ মাসে হারাধন বাড়িতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে না থেকে বোনের ঘরে বসবাস করেন।

এ অবস্থায় নানা অজুহাতে কয়েকদফা শারীরিক নির্যাতন করে হারাধন, তার বোন, ভাগ্নেসহ তার পরিবারের লোকজন। ইউএনওর কাছে সীমা রানী লিখিত অভিযোগ দিলে তার কার্যালয়ে ডাকা হয় হারাধনকে। এতে হারাধন তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং তার পাওনা বুঝিয়ে দেবেন বলেও ইউএনওকে জানান। কিন্তু গত ২০ দিনেও ইউএনওর কাছে আর যাননি হারাধন।

এই সময়ে হারাধন আবারো তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দিয়ে উল্টো মারধর করছেন। গত ৬ দিন কিশোরী মেয়েসহ সীমা রানীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বসতঘরে তালাবন্ধ করে রেখেছেন হারাধনসহ তার বোন ও ভাগ্নে। কিন্তু সীমা রানীও নাছোড়বান্দা। স্বামীসহ তার লোকজন একের পর এক নির্যাতন চালালেও বাড়ি ছেড়ে যেতে তিনি নারাজ। এ অবস্থায় অন্যের রান্নাঘরে রাত যাপন করছেন তিনি।

ভুক্তভোগী সীমা রানী বলেন, আমাকে দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। স্বামী এখন যাযাবর। কারণে-অকারণে আমাকে বোন-ভাগ্নেসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন দিয়ে নির্যাতন করছে। পুলিশকে আসে কিন্তু পদক্ষেপ নেয় না। আমার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমার কিশোরী মেয়েকে নিয়ে মহাবিপদে রয়েছি।

অভিযুক্ত হারাধন তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার মা অসুস্থ থাকার কারণে বিপদে পড়ে সীমাকে ভগিনীপতির সহযোগিতায় বিয়ে করেছিলাম। আমার নামে ইউএনওর কাছে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে সে। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। বরং আমাকেই মারধর করেছে। তাই বাধ্য হয়ে বাসার মূল দরজায় তালা মেরেছি। বেশি কিছু বলতে চাই না।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ বলেন, ২০ দিন আগে ওই পরিবারের উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে সীমা রানীর ভরণপোষণেরণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তার স্বামী হারাধনও তা মেনেও নিয়েছেন। এরপর হারাধন আর আসেনি। বিষয়টি লিগ্যাল এইড কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া বলেন, সীমা রানী তার স্বামী ও ননদ, ভাগ্নের হাতে নির্যাতনের বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। ঘটনাস্থলে অফিসারসহ দুই পুলিশ সদস্য পাঠানো হয়েছিল। তখন সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। তবে দুইপক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছে। বর্তমানে সীমা রানী গত ছয় দিন বসতঘরের বাইরে রাতযাপনের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম