বিদ্যালয়ে মদ্যপান, ৬ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের পর ফিরিয়ে নেওয়ায় ক্ষোভ
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৩, ১০:৩২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নাটোর শহরতলির প্রাচীন বিদ্যাপীঠ দিঘাপতিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ৬ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় চলা অবস্থায় ভবনের সিঁড়িতে বসে মদ্যপান করার পর তাদের বহিষ্কারের একদিন পর ফিরিয়ে নেওয়ায় অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বুধবার বিকালে যুগান্তরকে বলেছেন, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত ছাত্র ও তাদের অভিভাবকরা অনুতপ্ত হওয়ায় সংশোধনের জন্য তাদের একবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী, বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা জানান, গত সোমবার বিদ্যালয় চলাকালে ক্লাস রুমের পাশেই নির্মাণাধীন নতুন ভবনের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে বসে মদ্যপান করছিল অষ্টম শ্রেণির ৬ শিক্ষার্থী। অন্য ছাত্রদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক নির্মাণাধীন নতুন ভবনের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে বসে মদ্যপান করা অবস্থায় হাতেনাতে তাদের ছয়জনকে ধরে অফিসে নিয়ে আসেন।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় শিক্ষকমণ্ডলীর সম্মিলিত সিদ্ধান্তে মদ্যপান করা অবস্থায় হাতেনাতে মদসহ আটক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বহিষ্কৃত ছয় শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তবে অন্য অভিভাবকরা শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে পূর্ণ সমর্থন জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তারকে অবহিত জানান।
মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার অভিযুক্ত অভিযুক্ত ছাত্র ও তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় নিয়ে বৈঠক করেন। এ সময় অভিযুক্তরা অনুতপ্ত হওয়ায় সংশোধনের জন্য তিনি তাদের একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কথা অনুযায়ী ছাড়পত্র প্রত্যাহার করে বুধবার তাদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বলেন প্রধান শিক্ষক। বুধবার সকালে অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বিদ্যালয়ে আসলে অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও একটি সরকারি ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন- ‘যারা সন্তানের মদ খাওয়া থামাতে পারে না, কিন্তু শিক্ষকদের ওপর চড়াও হতে পারে, তাদের সবার সামনে আনা দরকার। আর আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠের এমন খবর দেখব, তা কল্পনাও করিনি!’
আরেক সাবেক ছাত্র রুবেল হোসেন বিষয়টি নিয়ে ধিক্কার জানিয়ে লিখেছেন, ‘এখানে মদ গাঁজা খাওয়ার জন্য আলাদা রুম বরাদ্দ দেওয়া হোক।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দিঘাপতিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম যুগান্তরকে বলেছেন, ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে একজন তিন দিন আগে রিহ্যাব থেকে ফিরেছে। এসব অভিযুক্ত ছাত্ররা ক্লাসে ফিরে আসায় সাধারণ ছাত্ররা শিক্ষকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষকরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনায় বিদ্যালয়ের সাড়ে আটশ শিক্ষার্থীর মধ্যে এই মরণনেশা সংক্রমণ হয় কিনা সে আতঙ্কও তাদের মধ্যে রয়েছে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে তাদের ক্লাসে ফিরানো হয়েছে। শিক্ষকরা অন্য ছাত্র ও অভিভাবকদের বুঝিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
