শিক্ষকদের ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধের অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

 রাজশাহী ব্যুরো 
২৬ মে ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

‘চাঁদা না পাওয়ায়’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কয়েকজন শিক্ষকের বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন মাইলস্টোন স্কুলের পশ্চিম পাশে এ ঘটনা ঘটেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বসবাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বহুতল ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন; কিন্তু বিশেষ সুবিধা বা মোটা অংকের চাঁদা না পাওয়ায় নগরীর ৩০নং ওয়ার্ড (দক্ষিণ) যুবলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান ইয়ামিনসহ তার ক্যাডার বাহিনী বুধবার রাতে হামলা চালিয়েছে। এরপর বন্ধ করে দেয় নির্মাণ কাজ। 
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। থানায় জিডি করা তিন শিক্ষক হলেন- ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হ্যাপি কুমার দাস এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. ওসমান গণি।

জিডি এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, নগরীর মির্জাপুর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা মিলে প্রায় ১১ কাঠা জমি কেনেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে আনুমানিক রাত ৮টার মধ্যে বাড়ি নির্মাণের অংশ হিসেবে শ্রমিকরা মাটি কাটছিলেন। এ সময় ইয়ামিন, আলামীন এবং এখলাছুর রহমানের নেতৃত্বে আনুমানিক ১৫-২০ জনের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। 

তারা দেশীয় অস্ত্রসহ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুটি ট্রাক ও এক্সকেভেটর ঘটনাস্থল থেকে সরাতে বাধ্য করে। এ সময় তারা শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে বলে- তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো নির্মাণ কাজ করা যাবে না। এতে নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

ওই ভবন নির্মাণ কাজের রডমিস্ত্রি মো. রনি আলী বলেন, বুধবার আমরা বিল্ডিং নির্মাণের জন্য মাটি কাটার কাজ করছিলাম। সন্ধ্যার পর তারা কাজের সাইটে এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা আমাদের ট্রাক, এক্সকেভেটর সরিয়ে নিতে বলে। অন্যথায় তারা এগুলো পুড়িয়ে দেবে। আমরা ভয়ে সবকিছু সরিয়ে নিয়েছি। এ সময় তারা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে এ কাজ করতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। 

ভুক্তভোগী রাবির ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ওসমান গণি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষকসহ ১৭ জন মির্জাপুরে ১১ কাঠা জমি কিনে সেখানে ১১ তলা একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই। বুধবার ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ ওই দিন সন্ধ্যার পর ইয়ামিন ও আলামিনসহ প্রায় ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ নির্মাণ শ্রমিকদের মারপিট, অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা জীবনের নিরাপত্তাসহ যাতে নির্বিঘ্নে দ্রুত কাজ করতে পারি সেজন্য থানায় জিডি করেছি।

মতিহার থানা সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা ইয়ামিনের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাসহ অন্তত ৪-৫টি মামলা রয়েছে। 

৩০নং ওয়ার্ডের যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, ইয়ামিন এবং তার ক্যাডার বাহিনী এলাকায় প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ইয়ামিন এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা ইয়ামিন বলেন, যে জায়গাটিতে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ছিল। আমরা স্থানীয় কয়েকজন মিলে জায়গাটি পরিষ্কার করি। সেই সময় শিক্ষকরা কথা দিয়েছিলেন বাড়ি নির্মাণের কাজটি আমাদের দিয়ে করাবেন; কিন্তু হঠাৎ করে দেখি বাইরের লোকজন গিয়ে কাজ করছেন। পরে আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম। এখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

এ ব্যাপারে মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আমরা আদালতের কাছে অনুমতি চাইব। আদালত অনুমতি দিলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। তদন্তে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জেলার খবর
অনুসন্ধান করুন