সন্দ্বীপে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, হামলা-গুলিবর্ষণে আহত অর্ধশতাধিক
যুগান্তর প্রতিবেদন ও চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৩, ১১:৫৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সন্দ্বীপে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার ফলাফল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ১৫টির বেশি হামলা, গুলিবর্ষণ, ভাংচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ।
পুলিশ জানায়, সন্দ্বীপে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ না করাই সন্ত্রাসীরা এসব হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের আনারস প্রতীকে নির্বাচনী প্রচারণা ও এজেন্ট হিসেবে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব ছিলেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, চট্টগ্রাম এলাকার এক প্রভাবশালী এমপির নির্দেশে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কতিপয় ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নামধারী নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে এসব হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর কালাপানিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কাদের মেম্বার ও তার সহোদর ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজের উপর হামলা হয়।
কালাপানিয়া ২নং ওয়ার্ডের ২নং কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে মাগরিবের পরে কালাপানিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান টিটুর নেতৃত্বে হোন্ডা এবং সিএনজিযোগে ৫০ জনের অধিক সন্ত্রাসী কালাপানিয়া ২নং ওয়ার্ডের দ্বীপবন্ধু সংসদে অবস্থানরত কালাপানিয়া আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মো. আবদ্দুল কাদের মেম্বারের ওপর অতর্কিত গুলি চালায়। সঙ্গে কিরিচের কোপ ও লাঠির হামলা চালানো হয়। সেখানে থাকা চেয়ার, টেবিল, টেলিভিশন ও বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাঙচুর করা হয়।
প্রকাশ্যে চেয়ারম্যান পরপর দুই রাউন্ড গুলি চালালে কাদের মেম্বারের বড় ভাই ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজসহ সাধারণ পথচারী আহত হয়।
পুলিশ জানায়, ভয়াবহ এ হামলার নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান আলিমুর রাজি টিটু, চেয়ারম্যানের ছোটো ভাই মিঠু, চেয়ারম্যানের ভাতিজা খুশবুর ছেলে জয়, ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাহার উদ্দীন, ১নং ওয়ার্ডের নিজাম উদ্দীন, মারুফ আহমেদ শুভ, ২নং ওয়ার্ডের বেলাল উদ্দীন, দিলদার, সাহেদ, মো রাসেল, সুমন (ভান্ডারির ছেলে), রিপাত (পিতা বোরহান), রিপাত (পিতা রিদোয়ান) আরাফাত হোসেন, মো. হোসেন, মাহফুজুর রহমান সুমন (সন্দ্বীপ ছাত্রলীগ সভাপতি) মো তাজুল ইসলাম (ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি) বাত্তি রুবেল, কালা রবি, নবীন হাসান, সিরাজ (ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা) বাবলু মেম্বার, জাকের মেম্বার, মামুন (ইউনিয়ন ট্যাক্স গ্রহণকারী), সাজিদ, আবু তালিব ওরফে আবোল তাবোল, সন্ত্রাসী দেলোয়ার, সন্ত্রাসী কামাল, আবদুস সামাদ আজাদ (উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) রাসেল, নজরুল (জামসেদ নেতার ছেলে), জাহিদ হাসান ছোট্টন, ছোট্টনের বড় ভাই জাবেদ, হাবিব উল্যাহ বাহার, মো রাকিবসহ শতাধিক ব্যক্তি।
জানা গেছে, কাদের মেম্বার আসন্ন কালাপানিয়া ইউপির চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী। এই কারণে টার্গেট ছিল তাকে মেরে ফেলা। মুমূর্ষু অবস্থায় আহত দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কাদেরের মাথায় বড় ধরনের জখমের চিহ্ন আছে। তাকে ২০টির বেশি সেলাই দিতে হয়েছে।
এই ঘটনায় সন্দীপ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম।
পুলিশ আরও জানায়, একই দিন গাছুয়া হক সাহেবের বাজার এলাকায় গাছুয়ার চেয়ারম্যান আবু হেনা ও তার ছোট ভাই সুমনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বারের বাড়িতে হামলা করে এবং সেখানে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। তারা শুক্রবার গাছুয়া এ কে একডেমি স্কুলের সামনে কামরুল নামের এক যুবলীগ নেতার দোকানে হামলা করে এবং তাকে না পেয়ে তার ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
আনারস প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করায় শুক্রবার সেনের হাটে পৌরসভা আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন পাটোয়ারীর দুটি মোটরচালিত অটোরিকশা ভাংচুর করে। ধোপারহাটে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ছিদ্দিকের নেতৃত্বে ধোপারহাটে সন্ত্রাসী সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করা নেতাকর্মীদের খুঁজতে থাকে এবং আনারস প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট রাজিবুল আহসান সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় শ্লোগান দেয়।
এর আগে নির্বাচনের দিন রাতে ফুল মিয়া চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এছাড়া মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নে ১০ জন জেলের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এসব বিষয়ে জানতে সন্দীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পর কয়েকটি স্থানে হামলা মারধোর ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেসব স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব হামলার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। মামলা হলে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
