অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না আমেনার, পড়াশোনা বন্ধের পথে বোন মনিকার
প্রান্ত সাহা বিভাস, কলমাকান্দা (নেত্রকোনা)
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অভাব-অনটনের সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেনা আক্তার (২৬) নামের এক তরুণী। গত তিন বছর ধরে বিছানা থেকে উঠে চলাফেরা করতে পারছেন না আমেনা। অর্থ সংকটে তার চিকিৎসা করাতে পারছেন না ভাই আল আমিন। তার বাবা প্রায় ১৫ বছর আগে তাদের নানার বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান।
মা মমতাজ বেগমও পাঁচ বছর আগে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বোন মনিকা আক্তার দুর্গাপুর মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। টাকার অভাবে তার পড়াশোনাও প্রায় বন্ধের পথে। আমেনা আক্তারের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম মো. জসিম উদ্দিন।
একদিকে আমেনার চিকিৎসা, অন্যদিকে সংসার চালানোর খরচ আবার বোন মনিকা আক্তারের পড়াশুনার খরচ। সব মিলিয়ে ভাই আল আমিনের পক্ষে এত খরচ বহন করা আর কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছে আমেনা। আর বোন মনিকার পড়াশোনাও টাকার অভাবে প্রায় বন্ধের পথে।
রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ছোট্ট একটি ভাঙা ঘরের বারান্দায় ত্রিপল বিছিয়ে শুয়ে আছে আমেনা আক্তার। পাশের অপর আরেকটি ঘরে মনিকা রান্না করছে। বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে সেই ঘরটির চালের টিনগুলো প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। অনেক চেষ্টার পরও আমেনার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি যুগান্তর প্রতিবেদকের।
পরে কথা হয় বোন মনিকার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি যখন খুব ছোট। ঠিক তখনই আমার বাবা আমাদের রেখে ঢাকায় চলে যান। এরপর থেকে বাবা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বড় বোন আমেনার বয়স যখন ২০ ঠিক তখনই সে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক পরামর্শ দেন বোনকে নিয়ে ঢাকায় যেতে। কিন্তু টাকার অভাবে সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় তার। কিছুদিন পরে সে মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলে। বর্তমানে বোন বিছানায় মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এ অবস্থা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
তিনি বলেন, ভাই আল আমিন ইলেকট্রিকের কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার খরচ চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে আবার বোনের চিকিৎসা ও আমার পড়াশোনার খরচ চালানো ভাইয়ের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই ভাই চায় আমি যেন পড়াশোনা ছেড়ে দেই।
মনিকার শিক্ষক দুর্গাপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক তোবারক হোসেন খোকন বলেন, মনিকা আমাদের কলেজের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার ইচ্ছা পড়াশোনা করে পুলিশ কর্মকর্তা হবে, বড় বোনের অসুস্থতার কারণে মনিকা নিয়মিত কলেজে আসতে পারছে না। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যও তার পরিবারের নেই। সরকারিভাবে আমেনার চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে, মনিকার পড়াশোনা করতে আর কোনো বাধা থাকত না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আমেনার পরিবারের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আমেনার চিকিৎসার জন্য যদি সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়, তবে সেখান থেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। অপরদিকে মনিকার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সব সময় পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।
