সম্পদ আত্মসাতের ষড়যন্ত্র দেবরদের বিরুদ্ধে, কোর্টে ২ ধরনের ভিসারা রিপোর্ট
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার শরীফপুরে প্রয়াত ব্যাংক কর্মকর্তা (ম্যানেজার) গিয়াস উদ্দিনের রেখে যাওয়া পৈতৃক জমি, ভিটে-বাড়ি এবং পেনশনের টাকা উত্তোলন নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী জাহানারা বেগম (৬৫)।
মঙ্গলবার দুপুরে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ একটি সুখী পরিবার নিয়ে জেলা শহরের বরুদা নামক স্থানে দুইতলা একটি নিজস্ব বাড়িতে তারা বসবাস করতেন। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ আমার স্বামী গিয়াস উদ্দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা যান। বিষয়টি স্বামীর পরিবারের অন্যদের জানানো হয়; কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন গিয়াস উদ্দিনকে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ তোলেন।
তিনি আরও বলেন, আমার দেবরদের (মৃতের ভাই) মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এএসপি) হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে নকল ভিসারা রিপোর্ট তৈরি করে কোর্টে জমা দেন। যা সঠিক নয় বলে তথ্য কমিশনে ভিসারা রিপোর্ট কর্মকর্তারা কোর্টে হাজির হয়ে নিশ্চিত করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোর্টে যে ভিসারা রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এটাই সঠিক, তাতে বিষ পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী জাহানারা বেগম বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার প্রায় ৩০ মিনিট পর ডাক্তার গিয়াস উদ্দীন খানকে মৃত ঘোষণা করেন। এর প্রায় ছয় মাস আগে পৈতৃক সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা নিয়ে গিয়াস উদ্দীন খানের সঙ্গে তার ভাইদের বিরোধ হয়। যেখানে স্বামীর মৃত্যুর বিষয় সেখানে জাহানারা বেগমের দেবররা হাসপাতালে এসে তাদের গালিগালাজ শুরু করেন এবং জাহানারা বেগমসহ তার ছেলে ও মেয়েদের মৃতের কাছে যেতে বাধা দেন। এমনকি পুলিশ ডেকে এনে তাদের গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যান।
থানায় নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, আপনাদের নিরাপত্তার জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছেলে তার বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে কান্নাকাটি করে এবং বাবার জানাজা পড়বার জন্য পুলিশের কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করলেও দেওয়া হয়নি। পরদিন এক দেবর বশির খান বাদী হয়ে মৃতের এক ছেলে, এক মেয়ে, এক শ্যালক, এক শ্যালিকাসহ জাহানারা বেগমকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পর্যায়ক্রমে তারা দীর্ঘ ৪-৫ মাস জেল খেটে স্থায়ী জামিনে বের হন।
এদিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিপোর্টে ব্যাংক কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন খানের মৃত্যু স্বাভাবিক আসে। কিন্তু বাদীপক্ষ বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে ভিসারা অফিসে পরীক্ষার জন্য দেয়। পরে জাহানারা বেগম তাদের উকিলের মাধ্যমে জানতে পারেন রিপোর্টে বিষ পাওয়া গিয়েছে- এমন একটি মিথ্যা রিপোর্ট আদালতের নথিতে জমা হয়েছে। পরে সত্যিকার ভিসারা রিপোর্ট পাবার জন্য তথ্য কমিশনে জাহানারা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন।
তথ্য কমিশনের বিচারক ভিসারা রিপোর্ট কর্মকর্তাদের হাজির হবার জন্য সমন প্রেরণ করেন। নির্দিষ্ট সময়ে কর্মকর্তারা হাজির হয়ে জানান, তাদের কাছে সংরক্ষিত রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী মৃত গিয়াস উদ্দীন খানের শরীরে কোনো বিষের চিহ্ন বা আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সার্বিক তদন্ত না করে বাদীর ভাই ফরিদ আহম্মেদ খান একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এএসপি) হওয়ায় তার কথায় প্রভাবিত হয়ে চার্জ গঠন করে দাখিল করেন।
মামলা বাদী মৃতের ভাই বশির খান বলেন, আমরা লোকমুখে শুনেছিলাম আমার ভাইকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছিল। পরে আবার ভিসারা রিপোর্টে জানা যায় বিষ প্রয়োগে মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আবার পরবর্তীতে আরেকটা ভিসারা রিপোর্টে স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত হয়। মামলা যেহেতু বিচারাধীন তাই আইন অনুযায়ী তার ভাই গিয়াস উদ্দীন খানের ছেলে এবং স্ত্রী সম্পত্তি দখলে আসতে পারবেন না। এছাড়া ব্যাংকে এফডিআর করা ৫০ লাখ টাকা তারা তুলতেও পারবেন না।
মৃতের আরেক ভাই সহকারী পুলিশ সুপার (এসবি ঢাকা) ফরিদ আহমেদ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ভালো জানেন বলে ফোন কেটে দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই গাজীপুরের ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান জানান, তৎকালীন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে আবার আবেদন করা হয় প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের বরাবর। সেখানের রিপোর্টে বিষ পাওয়া যায়নি।
